Image description

রাজধানীর সাতটি সরকারি কলেজ নিয়ে ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ গঠনের পরিকল্পনার প্রতিবাদে শিক্ষকরা অবস্থান কর্মসূচি ও মানববন্ধন করেছেন। বুধবার দুপুর ১২টার দিকে আগারগাঁওয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সামনে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের ব্যানারে এই কর্মসূচি পালিত হয়।

সাত কলেজ স্বাতন্ত্র রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক ও ইডেন মহিলা কলেজের অধ্যাপক মাহফিল আরা বেগম বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি থেকে সাত কলেজকে অব্যাহতি দেওয়ার পর নতুন বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের প্রস্তুতি চলছিল। কিন্তু হঠাৎ ‘ঢাকা সেন্ট্রাল বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে নতুন কাঠামোর খবর প্রকাশিত হয়, যা কলেজগুলোর সক্ষমতা সংকোচন ও শতবর্ষের ঐতিহ্য ধ্বংসের আশঙ্কা তৈরি করেছে।”

তিনি জানান, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০১০-এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে। নীতিতে কলেজগুলোর অবকাঠামো, গ্রন্থাগার, ল্যাব উন্নয়ন এবং উচ্চশিক্ষা সম্প্রসারণের কথা বলা হলেও এই পরিকল্পনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংকুচিত করার চেষ্টা।

মানববন্ধনে শিক্ষকরা বলেন, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজসহ সাতটি ঐতিহ্যবাহী কলেজ দীর্ঘদিন ধরে স্বল্প খরচে মানসম্মত উচ্চশিক্ষা দিয়ে লাখো শিক্ষার্থী গড়ে তুলেছে। এসব প্রতিষ্ঠান সংকুচিত হলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের, বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষায় প্রবেশাধিকার সীমিত হবে।

শিক্ষকরা আরও জানান, ইডেন ও বদরুন্নেসার মতো কলেজগুলো রক্ষণশীল পরিবারের মেয়েদের জন্য উচ্চশিক্ষার অন্যতম ভরসাস্থল। এসব কলেজের কাঠামো পরিবর্তন করা হলে নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা বিস্তার এবং সংবিধানের ২৮(১), ২৮(২), ২৮(৪) ধারাসহ জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি ৪.৩ ও ৪.৪) এবং জাতীয় শিক্ষা নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে।

তারা সতর্ক করে বলেন, অধ্যাদেশ প্রণয়নের আগে অংশীজনদের মতামত ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত না হলে শিক্ষার্থী আন্দোলনের ঝুঁকি তৈরি হবে। ইডেন কলেজের সাম্প্রতিক আন্দোলন এর প্রমাণ। রংপুরের কারমাইকেল কলেজের উদাহরণ তুলে ধরে শিক্ষকরা জানান, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তরের আইন পাস হলেও আন্দোলনের মুখে তা বাস্তবায়ন হয়নি। পরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কারমাইকেল কলেজকে অধিভুক্ত কলেজ হিসেবে রাখা হয়।

শিক্ষকরা প্রস্তাব দেন, সাত কলেজের বিদ্যমান অবকাঠামো ও মানবসম্পদ কাজে লাগিয়ে কলেজিয়েট বা অধিভুক্ত কাঠামোতে পরিচালনা করা হোক। শিক্ষা ক্যাডারের মাধ্যমে প্রশাসন ও পাঠদানের দায়িত্ব নিশ্চিত করা, শিক্ষক নিয়োগ, গবেষণা বাজেট, ল্যাব ও গ্রন্থাগার সুবিধা বৃদ্ধি, আবাসন সংকট নিরসন এবং বৃত্তি সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে গুণগত উচ্চশিক্ষা বজায় রাখার দাবি জানান তারা।

মানববন্ধনে সাত কলেজের শিক্ষক, বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের নেতা এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মকর্তারা অংশ নেন।