Image description

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের মির্জাপুর ইউনিয়নের ছাত্রাবট গ্রামে চোখে পড়ছে সারি সারি লাউয়ের ঝাড়। সবুজ লতায় ঝুলছে বোতল আকৃতির উজ্জ্বল সবুজ লাউ। এগুলো কোনো সাধারণ লাউ নয়, লালতীর সীড লিমিটেডের উদ্ভাবিত হাইব্রিড জাত ‘ডায়না’। এ চাষে সাফল্য পেয়ে মুখে হাসি ফুটেছে কৃষক মো. জাহাঙ্গীর মিয়া ও গনি মিয়ার। তাদের এই সাফল্য এখন এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে তারা ৫৬ শতক জমিতে এ লাউয়ের চাষ শুরু করেন। আশার চেয়ে দ্রুতই মিলেছে ফল। চারা লাগানোর মাত্র ৫০-৫৫ দিনের মধ্যেই গাছে লাউ ধরতে শুরু করে। প্রতিটি লাউয়ের গড় ওজন দুই থেকে তিন কেজি। টানা তিন মাস ধরে ফলন দেয়ার ক্ষমতা রাখে এ জাত।

জাহাঙ্গীর ও গনি মিয়া জানান, জমি প্রস্তুত থেকে শুরু করে পরিচর্যা পর্যন্ত খরচ হয়েছে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। ইতোমধ্যেই প্রতি পিস লাউ ৪০-৫০ টাকা দরে বিক্রি করে তারা ৫২ হাজার টাকা আয় করেছেন। মৌসুম শেষে লাখ টাকারও বেশি আয় করার আশাবাদ তাদের।

কৃষক গনি মিয়া বলেন, “লাউ চাষে খরচ তুলনামূলক কম। বাজারে সবসময় লাউয়ের চাহিদা থাকে। তাই অন্য ফসলের তুলনায় এটি লাভজনক। স্থানীয় বাজার ছাড়াও অনেক ক্রেতা সরাসরি বাগান থেকে লাউ কিনে নিচ্ছেন। উৎপাদন শেষে আমরা টমেটো ও শিম চাষ করবো।”

শুধু তারা দুজনই নন, আশপাশের কৃষকরাও তাদের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়েছেন। স্থানীয় কৃষক বিকাশ সরকার জানান, “জাহাঙ্গীর ভাইদের চাষ দেখে আমাদেরও আগ্রহ তৈরি হয়েছে। অনেকেই এখন এই জাতের লাউ লাগানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন।”

বীজ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান লালতীর সীড লিমিটেডের ডিভিশন ম্যানেজার তাপস চক্রবর্তী বলেন, “হাইব্রিড ‘ডায়না’ লাউ উচ্চ ফলনশীল ও আকর্ষণীয়। এটি বাংলাদেশের আবহাওয়ায় উপযোগী। বোতল আকৃতির, উজ্জ্বল সবুজ রঙের এই লাউ উচ্চ তাপমাত্রা ও লবণাক্ততা সহনশীল। প্রতিটি লাউয়ের দৈর্ঘ্য ৩০-৩৫ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। কৃষকেরা সারা বছরই এটি চাষ করতে পারবেন।”

শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) উজ্জ্বল সূত্রধর বলেন, “এ বছর শ্রীমঙ্গল উপজেলায় প্রায় ৫২ হেক্টর জমিতে লাউ চাষ হচ্ছে। এখানকার মাটি ও আবহাওয়া লাউ চাষের জন্য অনুকূল। ধানচাষের তুলনায় খরচ কম হওয়ায় কৃষকরা দিন দিন লাউ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। আমরা নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন করছি এবং কৃষকদের নতুন জাত পরিচিত করাতে সহায়তা দিচ্ছি।”

কৃষকের এমন সাফল্য স্থানীয় অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। আগে অনাবাদি পড়ে থাকা জমি এখন সবুজ লতায় ভরে উঠছে। শুধু তাই নয়, এ সাফল্য দেখে এলাকার অনেক বেকার যুবকও কৃষিতে ঝুঁকছেন।

সব মিলিয়ে বলা যায়, শ্রীমঙ্গলের ছাত্রাবট গ্রামে হাইব্রিড লাউ ‘ডায়না’ চাষ কেবল দুই কৃষকের মুখেই হাসি ফোটায়নি, বরং অনাবাদি জমিকে কাজে লাগিয়ে কৃষিতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।