জাল সনদে ১২ বছর চাকরি: বেরোবি’র ফিজিক্যাল ইন্সট্রাক্টর সাময়িক বহিষ্কার

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শারীরিক শিক্ষা দপ্তরের ফিজিক্যাল ইন্সট্রাক্টর মোছাঃ ইরিনা নাহারের স্নাতকোত্তর সনদ জালিয়াতির অভিযোগে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত ১৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১৫তম সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মোঃ হারুন অর রশিদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ইরিনা নাহারের বিরুদ্ধে জাল সনদের মাধ্যমে চাকরি গ্রহণ ও পদোন্নতির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। কমিটি জাল সনদে চাকরি প্রাপ্তি ও পদোন্নতির প্রক্রিয়া খতিয়ে দেখবে।
জাল সনদের অভিযোগ ও বহিষ্কার
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইরিনা নাহারকে তার সনদের আসল কাগজপত্র জমা দেওয়ার জন্য সাত দিনের সময় বেঁধে দিয়েছিল। কিন্তু তিনি তা জমা দিতে ব্যর্থ হন। ফলে সিন্ডিকেট সভায় তাকে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সূত্র জানায়, ফিজিক্যাল ইন্সট্রাক্টর পদে নিয়োগের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী ন্যূনতম দ্বিতীয় শ্রেণির স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি এবং শারীরিক শিক্ষা বিভাগ থেকে বিপিএড ডিগ্রি থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু ইরিনা নাহার স্নাতকোত্তর ডিগ্রি ছাড়াই ২০১২ সালে তৎকালীন উপাচার্য প্রফেসর আব্দুল জলিল মিয়ার বিশেষ ক্ষমতায় অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগ পান।
২০২২ সালে তিনি ব্যক্তিগত ফাইলে অন্তর্ভুক্তির জন্য বেসরকারি এশিয়ান ইউনিভার্সিটি থেকে প্রাপ্ত একটি স্নাতকোত্তর সনদ জমা দেন। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সনদটি যাচাই করে জানতে পারে, এটি জাল। তবে তখন তার বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
নিয়োগ ও পদোন্নতির ইতিহাস
ইরিনা নাহার ১ মার্চ ২০১২ সালে অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার মোঃ শাহজাহান আলী মন্ডল স্বাক্ষরিত নিয়োগপত্রের মাধ্যমে ছয় মাসের জন্য অস্থায়ী ভিত্তিতে ফিজিক্যাল ইন্সট্রাক্টর পদে যোগদান করেন। ছয় মাস পর উপাচার্যের নিজস্ব ক্ষমতায় তার নিয়োগ আরও ছয় মাসের জন্য বৃদ্ধি করা হয়। পরবর্তীতে ২০২৪ সালের ২৩ মার্চ তাকে স্থায়ী পদে পদায়ন করা হয়।
অভিযুক্তের বক্তব্য
এ বিষয়ে ইরিনা নাহার বলেন, “আমি যে সার্টিফিকেট পেয়েছি, সেটাই জমা দিয়েছি। আমি কি জানতাম এটা জাল না কি?”
তদন্ত কমিটি গঠন
জাল সনদের মাধ্যমে চাকরি গ্রহণ ও পদোন্নতির বিষয়টি গভীরভাবে তদন্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। কমিটি এই ঘটনার বিস্তারিত তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করবে।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ঘটনা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও সততা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের পর এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে।
Comments