শ্রীমঙ্গলে বর্জ্য সমস্যা নিরসনে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে থেকে বর্জ সমস্যা নিরসনকল্পে পৌরসভা কর্তৃক প্রেরিত প্রস্তাব প্রধান প্রকৌশলী এলজিইডি-তে আটকে থাকার প্রতিবাদে ক্লাস বর্জন করে সড়কে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শ্রীমঙ্গল উপজেলার তিনটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজ, দি বাডস রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল এ্যান্ড কলেজ ও গাউছিয়া শফিকিয়া সুন্নিয়া দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা কলেজ রোডস্থ ময়লার বাগাড়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। এ সময় শিক্ষার্থীদের পক্ষে বক্তব্য দেন শিক্ষার্থী উম্মে নাফিসা মাইমুনাহ, আরিফ বক্স, জুবায়ের আহমদ।
এছাড়া শিক্ষকদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন, শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের বাংলা প্রভাষক সাইফুল ইসলাম, উপাধ্যক্ষ এবিএম মোখলেছুর রহমান ও অধ্যক্ষ মোঃ রাফি উদ্দিন।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজ, দি বাডস্ রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও গাউছিয়া শফিকিয়া সুন্নিয়া দাখিল মাদ্রাসার সামনে পৌরসভার বড় ময়লার ভাগাড়। প্রতিদিন ক্লাসে যেতে হলে এই পথ ব্যবহার করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। সড়ক জুড়ে ময়লার স্তুপ ও দুর্গন্ধের কারণে শ্বাসকষ্ট নিয়ে পথ চলতে হয়।
শিক্ষার্থীরা বলেন, “একদিকে রাস্তাজুড়ে ময়লার স্তুপ, অন্যদিকে যানজট। নাক চেপে ধরে যেতে হয়। তারা প্রশ্ন রাখেন- কবে সরবে এই ময়লার বাগাড়?
শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী উম্মে নাফিসা মাইমুনাহ জানান, ২৪ সালের ৫ আগস্টের পরে আমরা শিক্ষার্থীরা ইউএনওর কাছে যাই। যাওয়ার পরে তিনি আমাদের আবেদনটি মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছের বলে আমাদের আস্বস্ত করেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠিয়েছে বিষয়টি দেখার জন্য। কিন্তু দুঃখের বিষয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে আবেদনটি আটকা পড়ে আছে। কর্তৃপক্ষ কেন যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে না। সেজন্য আজকে আমরা তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা আমরা কালো ফিতা দিয়ে চোখে বেধে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছি।
দি বার্ডস রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল এ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী আরিফ বক্স বলেন, “আমাদের মানসিক চাপ বাড়ছে। সকালে কলেজে যাওয়ার সময় ময়লার দুর্গন্ধ সহ্য করতে হয়, এতে পড়াশোনায় মনোযোগ কমে যায়। আমরা চাই দ্রুত ময়লা সরানো হোক।”
সচেতন নাগরিকদের মতে, কলেজ রোডের ময়লার স্তুপ শুধু দুর্গন্ধ সৃষ্টি করছে না, বরং জনস্বাস্থ্যকে মারাত্মক ঝুঁকিতে ফেলছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, এই আবর্জনা থেকে মশা-মাছি জন্ম নিচ্ছে। ডেঙ্গু, টাইফয়েড, ডায়রিয়া, কলেরার মতো রোগ ছড়াতে পারে যেকোনো সময়। পাশাপাশি বৃষ্টি হলে ময়লার পানি সড়কে ছড়িয়ে পড়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি করছে।
শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ রাফি উদ্দিন বলেন, আমি দেখেছি স্যারদের আকুতি, আমাদের প্রিয় সন্তানদের আকুতি। আজ এখানে ১০-১৫ মিনিট দাড়িয়েছি আমার মতো বমি চলে আসতেছে। এটা কিভাবে সম্ভব? আমি জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলেছি এবং উপজেলা প্রশাসন এখানে এসেছিলেন, উনার সাথে কথা হয়েছে। উনাদের বলেছি আমাদের সন্তানদের দিকে তাকান এরা আপনার সন্তান, এ জাতির ভবিষ্যৎ। এদেরকে কখনো ময়লার বাগাড়ে রেখে আপনি একজন সফল মানুষ এটা কখনো চিন্তাই করতে পারেন না। আসুন সকলে মিলে হাতে হাত ধরি, এই ময়লার বাগাড় থেকে আমাদের সন্তানদের নিঃস্কৃতি দেই।
শ্রীমঙ্গল পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জহিরুল ইসলাম, “আমরা সমস্যাটা জানি। ময়লার বাগাড় স্থানান্তরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে।”
এ বিষয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌর প্রশাসক মোঃ ইসলাম উদ্দিন বলেন, ময়লার বাগাড় অপসারণের আবেদনটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয়ে আছে। এছাড়া উপস্থিত দুইটি ব্যবস্থা আছে। এটার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য চিন্তাভাবনা করেছি। আশা করি খুবই শীঘ্রই সমস্যা সমাধান হবে।
এর আগে ২০১৮ ও ২০২৩ সালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে থেকে ময়লার ভাগাড় অপসারণের দাবিতে ক্লাস বর্জন করে আন্দোলনে নেমেছিল স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার হাজারো শিক্ষার্থী। সে সময় জেলা প্রশাসকের আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত করলেও শিক্ষার্থীদের দাবি পাঁচ বছরেও পূরণ হয়নি। সর্বশেষ ৫ই আগস্ট ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর আবারে ময়লার ভাগাড় অপসারণের দাবিতে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমেছিল।
Comments