টাঙ্গাইলে এলজিইডির ১৯ প্রকল্পে দ্রুত অগ্রগতি, গড় সম্পন্ন ৮২ শতাংশ

টাঙ্গাইলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১৯টি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। মোট ২ হাজার ৬৭৮ কোটি ৮ লাখ ৮০ হাজার টাকার প্রাক্কলিত ব্যয়ের বিপরীতে ২ হাজার ২৮৯ কোটি ৯৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা ব্যয়ে প্রকল্পগুলোর গড় অগ্রগতি ৮২ শতাংশে পৌঁছেছে। নির্বাহী প্রকৌশলীর কঠোর তত্ত্বাবধান ও সার্বক্ষণিক তদারকির কারণে এই সাফল্য অর্জিত হয়েছে।
টাঙ্গাইল এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, এই অর্থবছরে গৃহীত ১৯টি প্রকল্পের মধ্যে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, সড়ক মেরামত, সেতু নির্মাণ, পানি সম্পদ উন্নয়ন, এবং সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাত রয়েছে। নিম্নে প্রতিটি প্রকল্পের বিস্তারিত অগ্রগতি তুলে ধরা হলো:
-
গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প-৩ (আইআরআইডিপি-৩): ১৬২ কোটি ৩০ লাখ ৫৫ হাজার টাকা ব্যয়ে ১৭২টি স্কিমের মধ্যে ১৪৭টি সম্পন্ন, ২৫টি চলমান। ভৌত অগ্রগতি ৯৪ শতাংশ।
-
টাঙ্গাইল উন্নয়ন প্রকল্প (আইআরআইডিপি-টাঙ্গাইল): ৫৩১ কোটি ২৩ লাখ ৮৩ হাজার টাকা ব্যয়ে ৭৩৭টি স্কিমের মধ্যে ৪৮০টি সম্পন্ন, ২১৪টি চলমান, ৯টি বাতিল, এবং ৩৪টি স্কিমের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। ভৌত অগ্রগতি ৭৯ শতাংশ।
-
ময়মনসিংহ অঞ্চলে পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন (এমআরআরআইডিপি): ৫০৭ কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪৬৭টি স্কিমের মধ্যে ৩৭৯টি সম্পন্ন, ৭৯টি চলমান, এবং ৯টি বাতিল। ভৌত অগ্রগতি ৮৭ শতাংশ।
-
পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ (সিআইবিআরআর): ১১২ কোটি ২৫ লাখ ৯৮ হাজার টাকা ব্যয়ে ১৩টি স্কিমের মধ্যে ২টি সম্পন্ন, ৬টি চলমান, ৪টি বাতিল, এবং ১টি স্কিমের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। ভৌত অগ্রগতি ৫২ শতাংশ।
-
গ্রামীণ সড়ক মেরামত ও সংরক্ষণ (জিওবিএম): ৬২০ কোটি ৭ লাখ ১০ হাজার টাকা ব্যয়ে ৮৬টি স্কিমের মধ্যে ৭০টি সম্পন্ন, ১৫টি চলমান, এবং ১টি স্কিমের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। ভৌত অগ্রগতি ৮৬ শতাংশ।
-
উপজেলা-ইউনিয়ন ও গ্রাম সড়কে অনূর্ধ্ব ১০০ মিটার সেতু নির্মাণ (ইউএইচবিপি): ৮৪ কোটি ৫২ লাখ ২৯ হাজার টাকা ব্যয়ে ১৮টি স্কিমের মধ্যে ১০টি সম্পন্ন, ৭টি চলমান, এবং ১টি বাতিল। ভৌত অগ্রগতি ৯২ শতাংশ।
-
ঢাকা বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা-ইউনিয়ন সড়ক প্রশস্তকরণ ও শক্তিশালীকরণ (ডিডিআইআরডব্লিউএসপি): ১৯০ কোটি ৩৮ লাখ ৮৩ হাজার টাকা ব্যয়ে ৪১টি স্কিমের মধ্যে ২২টি সম্পন্ন, ১৮টি চলমান, এবং ১টি বাতিল। ভৌত অগ্রগতি ৯০ শতাংশ।
-
ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পল্লী সড়ক অবকাঠামো পুনর্বাসন (সিএএফডিআরআইআর): ১০১ কোটি ১৮ লাখ ৬২ হাজার টাকা ব্যয়ে ৫৮টি স্কিমের মধ্যে ৩৩টি সম্পন্ন, ২৩টি চলমান, এবং ২টি বাতিল। ভৌত অগ্রগতি ৭০ শতাংশ।
-
সাপোর্টিং ফর রুরাল ব্রিজেস (এসইউপিআরবি): ৯০ কোটি ১৬ লাখ ৭৬ হাজার টাকা ব্যয়ে ৩৫টি স্কিমের মধ্যে ২২টি সম্পন্ন, ১২টি চলমান, এবং ১টি বাতিল। ভৌত অগ্রগতি ৮৭ শতাংশ।
-
সার্বজনীন সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়ন (জিএসআইডি-২): ২১ কোটি ২৫ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ব্যয়ে ৬৪১টি স্কিমের মধ্যে ৫৩২টি সম্পন্ন, ৬৭টি চলমান, এবং ৪২টি স্কিমের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। ভৌত অগ্রগতি ৮০ শতাংশ।
-
গ্রাম সড়ক পুনর্বাসন (ভিআরআরপি): ১০২ কোটি ৪২ লাখ ৭০ হাজার টাকা ব্যয়ে ৮০টি স্কিমের কাজ সম্পূর্ণ সম্পন্ন। ভৌত অগ্রগতি ১০০ শতাংশ।
-
দেশব্যাপী গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন (সিআরএমআইডিপি): ৩৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৬টি স্কিমের মধ্যে ১২টি সম্পন্ন, ৩টি চলমান, এবং ১টি বাতিল। ভৌত অগ্রগতি ৯৫ শতাংশ।
-
সারাদেশে পুকুর-খাল উন্নয়ন (আইপিসিপি): ৫ কোটি ৮৮ লাখ ৫৮ হাজার টাকা ব্যয়ে ২৮টি স্কিমের মধ্যে ১৭টি সম্পন্ন, ৭টি চলমান, ৩টির দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে, এবং ১টি বাতিল। ভৌত অগ্রগতি ৮০ শতাংশ।
-
ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প-২য় পর্যায় (এসএসডব্লিউআরডিপি-২): ১৫ কোটি ৯৮ লাখ ৩৪ হাজার টাকা ব্যয়ে ৮টি স্কিমের মধ্যে ৬টি সম্পন্ন, ২টি চলমান। ভৌত অগ্রগতি ৮২ শতাংশ।
-
সমবায় মডেল গ্রাম প্রতিষ্ঠা পাইলট (ডিওসি): ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ১টি স্কিম চলমান। ভৌত অগ্রগতি ৬০ শতাংশ।
-
সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনা ইউনিট (আইডব্লিউআরএম): ১৩ কোটি ৭৬ হাজার টাকা ব্যয়ে ৮টি স্কিমের মধ্যে ৫টি সম্পন্ন, ৩টি চলমান। ভৌত অগ্রগতি ৮০ শতাংশ।
-
সমগ্র দেশে শহর ও ইউনিয়ন ভূমি অফিস নির্মাণ (টিইউএলও): ১ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৮টি স্কিমের মধ্যে ৭টি চলমান, ১টি বাতিল। ভৌত অগ্রগতি ১৭ শতাংশ।
-
উপজেলা-টাউন ও মৌলিক অবকাঠামো উন্নয়ন (ইউটিএমআইডিপি): ৩ কোটি ৫৬ লাখ ৮৩ হাজার টাকা ব্যয়ে ৬টি স্কিমের মধ্যে ২টি সম্পন্ন, ৪টি চলমান। ভৌত অগ্রগতি ৬৭ শতাংশ।
-
পিসিআরবিসিপি প্রকল্প: ৩২ কোটি ৯৭ লাখ ৮৬ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে টাঙ্গাইল পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য ৩৬ ও ৭২ ইউনিটের ৭তলা বিশিষ্ট দুইটি আবাসিক ভবন নির্মাণ প্রকল্প জায়গা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে স্থগিত রয়েছে।
টাঙ্গাইল এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ কামরুজ্জামান জানান, গত বছরের আগস্টে দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি প্রতিটি স্কিম পরিদর্শন করেছেন। সমস্যাযুক্ত স্কিমগুলোর দরপত্র বাতিল করা হয়েছে এবং ঠিকাদারদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, জেলায় ৯,২৫১ কিলোমিটার সড়ক নেটওয়ার্ক নির্মাণ করা হয়েছে, এবং গুণগত মান নিশ্চিত করতে কঠোর অবস্থান নেওয়া হচ্ছে।
এই প্রকল্পগুলোর সফল বাস্তবায়ন টাঙ্গাইলের গ্রামীণ অবকাঠামো, যোগাযোগ ব্যবস্থা, এবং জনজীবনের মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
Comments