Image description

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার গুমাই বিলসহ উপজেলার সবগুলো ধানের জমিতে ক্ষতিকর পোকা দমনে আলোক ফাঁদ স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে যেমন কৃষকের অর্থের সাশ্রয় হবে তেমনি যথেচ্ছ ক্ষতিকর কীটনাশকের প্রভাব থেকে প্রকৃতিকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।

আগামীকাল (১৫ সেপ্টেম্বর) সোমবার থেকে এ আলোক ফাঁদ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

এ ব্যাপারে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সালাউদ্দিন আল আজাদ জানান, সোমবার থেকে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সমস্ত ধানের জমিতে আলোর ফাঁদ স্থাপন করা হবে। আমনের বয়স এখন প্রায় চল্লিশ দিন। কোথাও কোথাও দুই মাসও হয়েছে। ক্ষতিকর পোকা দমনে সোমবার থেকে উপজেলা জুড়ে এ কর্মসূচি চলবে। ইতিমধ্যে গুমাই বিল সহ আমনের বিভিন্ন জমিতে আলোক ফাঁদ স্থাপন করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

আলোক ফাঁদ হল পোকার উপস্থিতি নির্ণয়ের জন্য একটি সাশ্রয়ী প্রযুক্তি। সাধারণত ধানী জমিতে ক্ষতিকর পোকার পাশাপাশি উপকারী পোকাও থাকে। কৃষকরা না বুঝে, না জেনে অকাতরে বালাইনাশক স্প্রে করার ফলে ক্ষতিকর পোকার পাশাপাশি উপকারী পোকামাকড় মারা যায়, এতে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়। তাই এ প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে পোকার উপস্থিতি নির্ণয় করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বালাইনাশক ব্যবহার করতে হবে কিনা।

এ বিষয়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা উত্তম কুমার শীল বলেন, আলোকফাঁদ মূলত একটি মনিটরিং যন্ত্র, যা দিয়ে ক্ষেতে কী কী পোকা আছে তা দেখা যায়। আলোকফাঁদ দ্বারা অনেক ধরনের পোকামাকড়ের উপস্থিতি তাৎক্ষণিকভাবে জরিপ করা যায়। বিশেষত ফসলের যেসব পোকা আলোতে আকৃষ্ট হয় তা ক্ষেতের কাছে আলোকফাঁদ পাতলে তাতে আকৃষ্ট হয় এবং মারা পড়ে। অনেক নিশাচর প্রকৃতির পোকাও আলোকফাঁদে ধরা পড়ে। তবে আলোর গুণাগুণের ওপর ফাঁদের কার্যকারিতা নির্ভর করে। ফ্লোরোসেন্ট বা তীব্র আলোর ফাঁদে বেশি পোকা আসে। এ ছাড়া হ্যাজাক বাতি এবং ২০০ ওয়াটের বৈদ্যুতিক বাতি দিয়ে ভালোভাবে পোকা দমন করা যায়। তবে কেরোসিন বাতি বা হারিকেনের আলোয় পোকা আসে সবচেয়ে কম। এমনকি টায়ার পুড়িয়ে বা মশাল জ্বেলেও অনেক পোকা দমন করা যায়, যেমন ধানের গান্ধী পোকা। এসব ফাঁদ তৈরি ও ব্যবহার অত্যন্ত সহজ হওয়ায় দিনে দিনে তা কৃষকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তা ছাড়া পোকা নিয়ন্ত্রণে অন্যান্য পদ্ধতির চেয়ে এ পদ্ধতি সস্তা ও পরিবেশবান্ধব। বর্তমানে কৃষি বিভাগের পরামর্শে আমন ধানের ক্ষেতে ব্যাপকভাবে সারা দেশে আলোকফাঁদ ব্যবহার করা হচ্ছে।

কৃষি কর্মকর্তারা আরও জানান, ফসলের শত্রু ও মিত্র সব ধরনের পোকাই আলোতে আকৃষ্ট হয়। বন্ধু পোকাদের মধ্যে বোলতা, লেডি বার্ড বিটল, ক্যারাবিড বিটল, ড্যামসেল ফ্লাই, ড্রাগন ফ্লাই ইত্যাদি। তথাপি ফসলের বেশ কিছু প্রধান ক্ষতিকর পোকাকে আলোক ফাঁদ দিয়ে সফলতার সাথে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। বিশেষত ধানের মাজরা পোকা, সবুজ পাতাফড়িং, বাদামি গাছফড়িং, সাদা পিঠ গাছফড়িং, সবুজ পাতাফড়িং, নলি মাছি, পাতা মোড়ানো পোকা, চুঙ্গি পোকা, থ্রিপস, খাটো শুঁড় ঘাসফড়িং ইত্যাদি। সবজি ফসলেরও অনেক পোকা যেমন কাটুই পোকা, সরুই পোকা বা ডায়মন্ড ব্যাক মথ, পাতা সুড়ঙ্গকারী পোকা ইত্যাদি আলোকফাঁদে ধরা পড়ে।

তাই আমাদের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাঙ্গুনিয়া চট্টগ্রাম কর্তৃক এ প্রযুক্তিটি প্রতি সপ্তাহে প্রতিটি ব্লকে নিয়মিত স্থাপন করছি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস জানান, এই আলোক ফাঁদের মাধ্যমে আমরা খুব সহজেই কৃষকদের ধানের ক্ষতিকর পোকা দমন সম্পর্কে বাস্তবে ধারণা জানাতে পারছি। যার ফলশ্রুতিতে কৃষকরা নিজেরাই এই পদ্ধতির মাধ্যমে পোকা চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছেন। এছাড়াও উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় গিয়ে কৃষকদের এই পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি ও পদ্ধতি সম্পর্কে উদ্ধুদ্ধ করছি। কৃষকরা এই পদ্ধতি ব্যবহার করে যেমন লাভবান হবে, অপরদিকে রক্ষা পাবে পরিবেশ।