
চট্টগ্রামে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব আবারও বাড়ছে। জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে গত একদিনে নতুন করে ৫৩ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। যা চলতি বছরের একদিনে সর্বোচ্চ সংখ্যা। এর আগে একদিনে এত বেশি রোগী ভর্তির নজির পাওয়া যায়নি। শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রকাশিত দৈনিক ডেঙ্গু প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রামে মোট শনাক্ত রোগী ১ হাজার ৯৫৭ জন। এর মধ্যে শুধু জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের প্রথম দুই সপ্তাহেই আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৫১২ জন। যা মোট রোগীর ৭২ শতাংশ। মৃত্যুর ক্ষেত্রেও একই চিত্র। চলতি বছরের ১৭ জন মৃত্যুর মধ্যে ১৫ জনই এই তিন মাসে প্রাণ হারিয়েছেন।
এদিকে, একদিনে ভর্তি হওয়া ৫৩ জনের মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ২২ জন, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ৪ জন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫ জন এবং বেসরকারি হাসপাতালে ২২ জন রোগী ভর্তি হন। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৯৫৭ জনে এসে দাঁড়িয়েছে। এরমধ্যে গতকাল পর্যন্ত বিভিন্ন হাসপাতালে ১৩৮ জন রোগী ভর্তি ছিলেন।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রতিদিনই রোগী ভর্তির খবর পাওয়া যাচ্ছে। গত একদিনে ৫৩ জন রোগী ভর্তি হওয়া এ বছরের সর্বোচ্চ। জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যায়। রোগীদের সেবায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
শুধু চলতি বছরই নয়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতেও একই চিত্র পাওয়া গেছে। ২০২২ সালে চট্টগ্রামে শনাক্ত হয়েছিল ৫ হাজার ৪৪৫ জন রোগী, মারা যান ৪১ জন। ২০২৩ সালে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়। সে বছর আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৪ হাজার ৮৭ জনে এবং মৃত্যু হয় ১০৭ জনের। ২০২৪ সালে রোগীর সংখ্যা কিছুটা কমে দাঁড়ালেও আক্রান্ত হন ৪ হাজার ৩২৩ জন। মৃত্যু হয় ৪৫ জনের। চলতি বছর এখন পর্যন্ত শনাক্ত রোগী দুই হাজারের কাছাকাছি হলেও বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, মৌসুমি প্রকোপের কারণে সেপ্টেম্বরের বাকি দিনগুলোতে আক্রান্তের হার আরও বাড়তে পারে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ডা. আবদুর রব বলেন, বর্ষার সময় জলাবদ্ধতা ও আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে এডিস মশার প্রজনন বেড়ে যায়। এজন্য জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গু সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ নেয়। প্রতিরোধ ছাড়া এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত চট্টগ্রামে রোগী ছিলেন মাত্র ৪৪৫ জন। কিন্তু বর্ষা শুরু হতেই চিত্র পাল্টে যায়। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের প্রথম দুই সপ্তাহেই আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৫১২ জন এবং প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন।
Comments