
বিজ্ঞানের জগতে এক নতুন মাইলফলক স্থাপন করেছেন চীনের বিজ্ঞানীরা। যুগ যুগ ধরে চিকিৎসাবিজ্ঞানের যে স্বপ্ন ছিল—প্রাণীর অঙ্গ মানুষের শরীরে প্রতিস্থাপন—তা এবার আংশিকভাবে বাস্তবে রূপ নিয়েছে। সম্প্রতি চীনের গবেষকরা 'ব্রেইন ডেড' এক ব্যক্তির শরীরে প্রথমবারের মতো জিনগতভাবে পরিবর্তিত শূকরের ফুসফুস সফলভাবে প্রতিস্থাপন করেছেন। যদিও এটি স্থায়ীভাবে কাজ করেনি, তবুও এই প্রচেষ্টা ভবিষ্যতের চিকিৎসা গবেষণায় এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।
'নেচার মেডিসিন' সাময়িকীতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চীনের গুয়াংজু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী সোমবার এই যুগান্তকারী প্রতিস্থাপনের ঘোষণা দেন। তারা জানান, প্রতিস্থাপনের পর ফুসফুসটি আংশিকভাবে কাজ করলেও নয় দিন পর এটিকে সরিয়ে ফেলা হয়, কারণ অঙ্গটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। মানুষের ফুসফুস প্রতিস্থাপন এমনিতেই একটি জটিল প্রক্রিয়া, যেখানে মৃত্যুহার অনেক বেশি। এই প্রেক্ষাপটে প্রাণী থেকে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের এই সাফল্যকে বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীরা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক হিসেবে দেখছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা এই ঘটনাকে একটি "বড় পদক্ষেপ" হিসেবে বর্ণনা করেছেন। নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রসম্যান স্কুল অব মেডিসিনের সহযোগী অধ্যাপক স্টেফানি চ্যাং বলেন, "এটি অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। যদিও এটিকে কার্যকর করতে আরও অনেক কাজ বাকি আছে, তবুও এটি একটি বিশাল অগ্রগতি।"
তিনি আরও বলেন, কিডনি রোগীদের জন্য ডায়ালাইসিসের মতো বিকল্প থাকলেও ফুসফুসের রোগের ক্ষেত্রে এমন কোনো বিকল্প নেই। তাই যদি প্রাণীর অঙ্গ কার্যকরভাবে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হয়, তবে তা নিঃসন্দেহে মানবজাতির জন্য একটি বড় খবর হবে।
যুক্তরাষ্ট্রে লক্ষ লক্ষ মানুষ ফুসফুসের বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। এদের মধ্যে অনেকে করোনাভাইরাস মহামারির পর দীর্ঘস্থায়ী জটিলতায় আক্রান্ত হয়েছেন। যদিও অঙ্গ দাতা পাওয়া যায়, তবে প্রায়শই নানা কারণে দান করা অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য উপযুক্ত থাকে না। এই সমস্যা মোকাবিলায় প্রাণীর অঙ্গ ব্যবহার একটি কার্যকর সমাধান হতে পারে।
এই গবেষণায়, চীনের বিজ্ঞানীরা ছয় ধাপে জিনগতভাবে পরিবর্তিত একটি শূকরের বাম ফুসফুস ৩৯ বছর বয়সী এক ব্রেইন ডেড ব্যক্তির শরীরে প্রতিস্থাপন করেন। হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল ও ম্যাসাচুসেটস জেনারেল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক রিচার্ড এন পিয়ারসন, যিনি শূকরের হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন, তিনি এই ঘটনাকে "চমকপ্রদ" বলে মন্তব্য করেছেন। তবে তিনি এটি স্থায়ীভাবে কাজ করছিল কিনা তা জানার ওপর জোর দিয়েছেন।
যদিও 'নিউ ইয়র্ক টাইমস' এই গবেষণা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যের জন্য চীনা বিজ্ঞানীদের সাথে ইমেইলে যোগাযোগ করেছিল, তবে তারা কোনো সাড়া দেননি। তবে এই গবেষণাটি নিঃসন্দেহে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে ফুসফুস প্রতিস্থাপনের সমস্যা সমাধানে নতুন আশা দেখাচ্ছে।
Comments