Image description

‘প্রাচ্যের ড্যান্ডি’ খ্যাত নারায়ণগঞ্জে হাজারো শিল্পকারখানা থাকলেও স্থানীয় তরুণ-তরুণীদের বেকারত্বের সমস্যা প্রকট। এ অবস্থায় রূপগঞ্জের বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের জন্য উদ্যোগ নিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের বিএনপির সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী ও নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মুস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু।

গত ২২ আগস্ট রূপগঞ্জের তারাবে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের এক উঠান বৈঠকে দিপু ভূঁইয়া বলেন, “রূপগঞ্জের মানুষ দীর্ঘদিন নেতৃত্বের অভাবে চাকরি ও কর্মসংস্থান থেকে বঞ্চিত। শিল্প মালিকরা কোটি কোটি টাকা আয় করলেও স্থানীয়দের চাকরি দিতে অনীহা দেখান। আমি চেম্বার অব কমার্সের সঙ্গে মিলে স্থানীয়দের জন্য চাকরির ব্যবস্থা করব।”

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, ২০০৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত রূপগঞ্জের সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী স্থানীয় না হওয়ায় এলাকার বেকারদের জন্য কার্যকর উদ্যোগ নেননি। ফলে শিল্পকারখানার প্রাচুর্য থাকলেও স্থানীয়রা চাকরি থেকে বঞ্চিত। এতে বেকারত্ব বৃদ্ধি ও মাদকাসক্তি বাড়ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন শিক্ষানুরাগী ও শ্রমিক নেতারা।

নারায়ণগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজের ছাত্র তাসরিক হোসাইন বলেন, “শীতলক্ষ্যার তীরে বড় বড় প্রতিষ্ঠান থাকলেও স্থানীয়রা চাকরি পায় না। এতে হতাশা তৈরি হচ্ছে।” স্নাতক ছাত্র মাহফুজ আহম্মেদ অনিক দিপু ভূঁইয়ার উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, “তিনি বেকারদের জন্য কিছু করতে পারবেন।”

রূপগঞ্জে দাউদপুর পুটিনা উচ্চ বিদ্যালয়ের অভিভাবক প্রতিনিধি কমিটির সভাপতি মশিউর রহমান বলেন, ‘আগে এখানে এমপি ছিলেন গোলাম দস্তগীর গাজী। তিনি এলাকার স্থানীয় না। এ কারণে তিনিও স্থানীয়দের চাকরির ব্যবস্থায় উদ্যোগী ছিলেন না। ফলে এখানকার মানুষ বঞ্চিত হয়েছে। বিএনপি ক্ষমতায় আসলে আমরা চেষ্টা করবো এখানকার বেকারদের কর্মসংস্থানের জন্য।’

প্রবীণ বিএনপি নেতা নগরপাড়া এলাকার বখতিয়ার উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, গত ১৭ বছর গাজী লুটপাট করেছে। অথচ রূপগঞ্জের সন্তানদের জন্য কিছুই করেনি। দিপু ভূঁইয়ারা তৎকালীন সময় থেকেই ছিলেন জমিদার। তার দাদা গোলবক্স ভূঁইয়া ছিলেন তিন নম্বর শীর্ষ ধনী। তার পিতা মুজিবুর রহমান ভূইয়া ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান। তার চাচা সুলতানউদ্দিন ভূইয়া ছিলেন সংসদ সদস্য। কালীগঞ্জের মসলিন কটন মিল, মুড়াপাড়া জুট মিল ছিলো তাদের। দেশের বৃহৎ কাপড়ের মার্কেট গাউসিয়া মার্কেটের কারণে হাজার হাজার মানুষ জীবিকা নির্বাহ করতে পারছেন। এ পরিবার যুগ যুগ ধরে রূপগঞ্জের মানুষদের জন্য কাজ করে আসছেন। দিপু ভূইয়া রূপগঞ্জের তরুণ-তরুণীদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টির জন্য অলরেডি বিভিন্ন শিল্পকারখানার মালিকদের সাথে কথা বলছেন। তার নিজের কোন চাওয়া-পাওয়া নেই। তিনি রূপগঞ্জের মানুষের জন্য কাঁদেন। কারণ তার শেকড়টা রূপগঞ্জে।

নারায়ণগঞ্জ জেলা গার্মেন্টস ও সুয়েটার শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি এম এ শাহীন বলেন, শুধু রূপগঞ্জ না পুরো জেলাতেই স্থানীয়দের চাকরি দেওয়ার ক্ষেত্রে মালিকদের একটা অনীহা দেখা দেয়। কারণ তাদের ধারণা থাকে যে স্থানীয়রা কারখানায় থাকলে বিশৃঙ্খলা করবে। কিন্তু এটা সত্য না। বরং স্থানীয়রা থাকলে বহিরাগতরা ঝামেলা করতে পারে না। স্থানীয়দের চাকরি না দিয়ে সামাজিকভাবে একটি বিশৃঙ্খলা ঘটতে পারে।

নারায়ণগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক রফিকুল ইসলাম বলেন, সারাদেশের মধ্যে রূপগঞ্জ এখন একটি শিল্পজোন এলাকা। এখানে প্রচুর কল-কারখানা ও দেশের বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। কিন্তু অনেক মালিক এখানকার স্থানীয়দের নানা অজুহাতে চাকরি দিতে চায় না বিধায় অনেকেই রূপগঞ্জ ছেড়ে অন্যত্র ছোটাছুটি করেন। বিপরীতে এখানকার প্রতিষ্ঠানে নিয়মিতই চাকরির বিজ্ঞাপন দেয়। উদ্যোগ নিয়ে এখানকার বেকারদের কর্মসংস্থান করা গেলে রূপগঞ্জে বেকারত্ব কমবে। মাদকাসক্তের সংখ্যা কমে আসবে।

মুস্তাফিজুর রহমান দিপু বলেন, আমি জেলার সব শিল্প মালিকদের সাথে পর্যায়ক্রমে কথা বলবো। যেহেতু রূপগঞ্জ আমার মা। রূপগঞ্জ আমার শেকড়। সেহেতু রূপগঞ্জ নিয়ে বেশি ভাবছি। আমার রূপগঞ্জের প্রত্যেকটা শিক্ষিত ছেলেমেয়ের যেনো কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয় সে ব্যবস্থা করবো। খুব শীঘ্রই এই কার্যক্রম শুরু করবো।