
নির্বাচনের আগে বিভিন্ন শর্ত নিয়ে জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি'র হুমকি এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য বাড়ার কারণে আগামী নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে এমনটাই উঠে এসেছে।
জামায়াত ও এনসিপির নেতারা মনে করছেন, সংস্কার প্রস্তাবের জুলাই সনদ বাস্তবায়ন এবং ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ নেতাদের বিচারের বিষয়টি এড়িয়ে একটি 'সাজানো' নির্বাচন করা হচ্ছে। তারা নির্বাচনের আগে এই দুটি বিষয় বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন। অন্যদিকে, বিএনপি চায় নির্বাচন সম্পর্কিত বিষয়গুলো ছাড়া অন্য সংস্কারগুলো নির্বাচিত সংসদ করবে।
জামায়াত ও এনসিপি'র এই অবস্থানের পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করার পর যৌথ বিবৃতি দেওয়ায় জামায়াত ও এনসিপি অসন্তুষ্ট। তারা মনে করে, এর মাধ্যমে একটি দলের প্রতি পক্ষপাত দেখানো হয়েছে।
এছাড়াও, জামায়াত ভোটের আনুপাতিক হার বা পিআর পদ্ধতি চালুর দাবি করছে। তাদের সঙ্গে ইসলামী আন্দোলনসহ আরও কিছু ইসলামপন্থী দল রয়েছে। তবে বিএনপি শুরু থেকেই এই পদ্ধতির বিপক্ষে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এনসিপি এবং জামায়াত ভোটের রাজনীতিতে নিজেদের দুর্বল অবস্থান থেকে বেরিয়ে আসতে এবং আসন সমঝোতার জন্য চাপ তৈরির কৌশল হিসেবে এসব দাবি সামনে আনছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, জামায়াত ও এনসিপির এসব দাবি বিএনপির ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে, যদি এই দলগুলো নির্বাচন বর্জন করে, তবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কমে যাবে এবং নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। এর ফলে বিএনপি অস্বস্তিতে পড়তে পারে।
বিএনপির নেতারা অবশ্য জামায়াত ও এনসিপির বক্তব্যকে 'মাঠের বক্তৃতা' হিসেবে দেখছেন। তারা মনে করেন, সব দলই শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নেবে। তবে জামায়াত ও এনসিপি নেতারা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, তাদের দাবি পূরণ না হলে তারা ভোট বর্জন করতে পারেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাহবুব উল্লাহ মনে করেন, এই দল দুটির অবস্থান বিএনপির ওপর চাপ সৃষ্টির একটি কৌশল হতে পারে। এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভেদের কারণে আগামী নির্বাচন সংঘাতপূর্ণ হতে পারে। তিনি গণঅভ্যুত্থানের সকল পক্ষকে ২০১৮ সালের মতো একটি জোট করার আহ্বান জানান।
এদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারের একজন উপদেষ্টা জানিয়েছেন, নির্বাচনের সময় ঘোষণার পর এখন নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে, তবে সংবিধান সংস্কারের মতো বিষয়গুলো আলোচনার ফোরাম এটি নয়।
Comments