Image description

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কাকে ভোট দেবেন, এ প্রশ্নে সিদ্ধান্তহীন ভোটারের সংখ্যা বেড়ে ৪৮ দশমিক ৫০ শতাংশে পৌঁছেছে। গত বছরের অক্টোবরে এই হার ছিল ৩৮ শতাংশ। ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) পরিচালিত ‘পালস সার্ভে ৩’-এর ফলাফলে এ তথ্য উঠে এসেছে।

সোমবার সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জাতীয় আর্কাইভস মিলনায়তনে ‘অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম, সংস্কার, নির্বাচন ও রাজনৈতিক দলের জনপ্রিয়তা’ বিষয়ক এই জরিপের ফল প্রকাশিত হয়। বিআইজিডি ও ভয়েস ফর রিফর্ম যৌথভাবে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে। জরিপের ফল তুলে ধরেন বিআইজিডির ফেলো অব প্র্যাকটিস সৈয়দা সেলিনা আজিজ।

জরিপে দেখা গেছে, ১৪ দশমিক ৪০ শতাংশ মানুষ কাকে ভোট দেবেন তা প্রকাশ করতে চাননি, এবং ১ দশমিক ৭০ শতাংশ জানিয়েছেন তারা ভোট দেবেন না। রাজনৈতিক দলের জনপ্রিয়তার ক্ষেত্রে, ১২ শতাংশ মানুষ বিএনপি, ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ জামায়াতে ইসলামী এবং ২ দশমিক ৮০ শতাংশ জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-কে ভোট দেওয়ার কথা বলেছেন। গত অক্টোবরে এই হার ছিল যথাক্রমে ১৬ দশমিক ৩০ শতাংশ, ১১ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং ২ শতাংশ। অর্থাৎ, বিএনপি ও জামায়াতের সমর্থন কিছুটা কমলেও এনসিপির সমর্থন সামান্য বেড়েছে।

এছাড়া, আওয়ামী লীগের (বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ) সমর্থন ৮ দশমিক ৯০ শতাংশ থেকে কমে ৭ দশমিক ৩০ শতাংশ হয়েছে। জাতীয় পার্টির সমর্থন ০ দশমিক ৭০ শতাংশ থেকে ০ দশমিক ৩০ শতাংশে এবং অন্যান্য ইসলামি দলের সমর্থন ২ দশমিক ৬০ শতাংশ থেকে ০ দশমিক ৭০ শতাংশে নেমেছে।

‘আপনার নির্বাচনী এলাকায় কোন দল জিতবে’ প্রশ্নে ৩৮ শতাংশ বিএনপি, ১৩ শতাংশ জামায়াত, ১ শতাংশ এনসিপি এবং ৭ শতাংশ আওয়ামী লীগের কথা বলেছেন।

জরিপে দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আশাবাদের হারও প্রকাশ পেয়েছে। ৪২ শতাংশ মানুষ মনে করেন দেশ রাজনৈতিকভাবে সঠিক পথে আছে, যা গত অক্টোবরে ছিল ৫৬ শতাংশ। অর্থনৈতিকভাবে সঠিক পথে আছে বলেছেন ৪৫ শতাংশ, যা আগে ছিল ৪৩ শতাংশ। অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রমকে ১০০-এ ৬৩ নম্বর দিয়েছেন উত্তরদাতারা, যা গত অক্টোবরে ছিল ৬৮।

নির্বাচন ও সংস্কারের বিষয়ে, ৫১ শতাংশ মানুষ ভালোভাবে সংস্কারের পর নির্বাচন চান, ১৭ শতাংশ জরুরি সংস্কারের পর, এবং ১৪ শতাংশ সংস্কার ছাড়াই নির্বাচনের পক্ষে। সংস্কারের ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ আইনশৃঙ্খলার উন্নয়ন, ১৭ শতাংশ দুর্নীতি দমন, এবং ১৯ শতাংশ রাজনৈতিক অস্থিরতা কমানোর কথা বলেছেন।

নির্বাচনের সময় নিয়ে ৩২ শতাংশ ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের আগে, ১২ শতাংশ ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি, ১১ শতাংশ জুন, এবং ২৫ শতাংশ ডিসেম্বর ২০২৬ বা তার পরে নির্বাচন চান। ৭০ শতাংশ মানুষ বিশ্বাস করেন, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে, যদিও ১৫ শতাংশ এতে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।

জরিপটি ১ থেকে ২০ জুলাইয়ের মধ্যে ৫,৪৮৯ জনের মতামত নিয়ে পরিচালিত হয়, যাদের ৫৩ শতাংশ পুরুষ, ৪৭ শতাংশ নারী, ৭৩ শতাংশ গ্রামের এবং ২৭ শতাংশ শহরের বাসিন্দা।

অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন বিআইজিডির জ্যেষ্ঠ রিসার্চ ফেলো মির্জা এম হাসান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক আসিফ মোহাম্মদ শাহান। আলোচনা সঞ্চালনা করেন ভয়েস ফর রিফর্মের সহ-আহ্বায়ক এ কে এম ফাহিম মাশরুর।