
মুন্সীগঞ্জের হিমাগারগুলো হতে আলু তেমন বিক্রিই হচ্ছেনা। বর্তমানে বাজারে আলুর যে দাম তাতে হিমাগার ভাড়াসহ কৃষকের জমি হতে হিমাগারে আলু আনতে যে খরচ হয়েছে তাই উঠছেনা উৎপাদন খরচতো দূরের কথা। এতে কৃষক হতাশ হয়ে আলু বিক্রি করতে হিমাগারে যাচ্ছেনা। ফলে হিমাগারে পরিমাণ মতো আলু বিক্রি হচ্ছেনা। পাইকাররা কৃষক আলু বিক্রি করতে না আশায় হিমাগারে বসে আলস্য সময় পার করছেন।
এবছর মুন্সীগঞ্জে প্রচুর আলু উৎপাদন হয়েছে। কিন্তু আলু উঠানোর পর হতে দাম না থাকায় কৃষক ক্ষতির মুখে পড়েন। দামের আশায় সংরক্ষণ করেছিলেন হিমাগারে। কিন্তু এতে আরো বেশি ক্ষতির মুখে পরেছেন কৃষক। আলু বিক্রি করে মূলধনতো দূরের কথা হিমাগার ভাড়া, হিমাগারে আলু আনতে যাতায়াত খরচ, খালি বস্তার দাম, মাপঝোপের খরচও উঠছে না।
৫০ কেজি ওজনের একবস্তা আলু বর্তমানে হিমাগারে বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৪৮০টাকায়। মুন্সীগঞ্জে হিমাগার ভাড়া ৩০০টাকা, একবস্তা আলু হিমাগারে আনতে ভাড়া স্থান ভেদে ৪০-১০০টাকা, খালি বস্তার দাম ৫০-৭০টাকা , হিমাগারে রাখার জন্য জমিতে আলু মাপঝোপ করতে খরচ আরো ২০-৩০টাকা সব মিলিয়ে এই খরচই উঠছেনা কৃষকদের।
জেলার কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এবার মোট ১০ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন আলু উৎপাদিত হয়েছে। এর মধ্যে চার লাখ ৫০ হাজার টন হিমাগারে রাখা হয়েছে, আর ছয় লাখ টন রাখা হয়েছিল জমিতে স্তূপকরে বাড়িতে বা আঙিনায় দেশীয় পদ্ধতিতে।
আলু চাষি ও ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন জানান, এক কেজি আলু চাষে খরচ হয়েছে ১৬ টাকা। হিমাগারে রাখলে খরচ বেড়ে হয় ২৬ টাকা। অথচ এখন হিমাগারে বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১২-১৩ টাকা। এতে কেজিপ্রতি গড়ে ১৩-১৪ টাকা করে লোকসান হচ্ছে। শুধু হিমাগারে রাখা আলু থেকেই কৃষকদের লোকসান হয়েছে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা।
অন্যদিকে, আলু চাষের সাথে সমৃক্তদের সাথে কথা বলে জানাগেছে বাড়িতে রাখা আলু পচে নষ্ট হয়ে ক্ষতির মুখে পরে কৃষক। আনুমানিক দেড় লাখ মেট্রিক টন আলু নষ্ট হয়েছে, যার ক্ষতি প্রায় ২৭০ কোটি টাকা। বাকি আলু কম দামে বিক্রি করতে গিয়ে কৃষকের আরও ৪৯৫ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। সব মিলিয়ে, আলু চাষ ও বিক্রিতে কৃষকদের মোট লোকসান দাঁড়িয়েছে ১১৬৫ কোটি টাকার বেশি।
সরেজমিনে বেশ কিছু হিমাগার ঘুরে দেখা যায়, হিমাগার হতে সেভাবে বিক্রি হচ্ছেনা আলু। তাই পাইকাররা হিমাগারে বসে বসে লুডু খেলছেন। আলুর দাম কম হওয়াতে কৃষক বিক্রি করতে হিমাগারে আসছেনা।
এ ব্যাপারে আলু ব্যবসায়ী ও কৃষক গোপীনাথ সরকার বলেন, আমি একজন কৃষক এবং ব্যবসায়ী। গতবছর আলুর দাম বেশি ছিল ভোক্তা অধিকার এসে আমাদেরকে বেশি দামে আলু বেচতে বাধা দিয়েছে। আমাদেরকে বকাঝকাও করছে। কিন্তু এ বছর যে আলুর দাম নাই এক মন আলু উৎপাদন করতে ৯০০ টাকা খরচ এখন বিক্রি করতেছি ৪৫০ টাকায় আমাদের তো সবই লস হিমাগার ভাড়া দিয়ে কিছুইতো আমাদের থাকেনা। এখনতো আমাদের কেউ খোজঁও নেয়না।
অপর আলু ব্যবসায়ী আলী আকবর বলেন, আমরা ব্যবসায়ী। কোটি কোটি টাকার আলু হিমাগারে রেখে এখোন বিক্রি করতে না পারায় আমাদের সাথে অনেক ব্যবসায়ী চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পরেছে। আমরা হিমাগারে আলু রেখে এবার সর্বস্বান্ত হয়ে গেছি। মূল চালানতো দূরের কথা হিমাগারের ভাড়ার টাকাইতো আলু বিক্রি করে উঠছেনা। গত বছর একটু দাম বাড়ছিল ভোক্তা অধিকার আসছে আমাদের বিভিন্নভাবে জ্বালাতন করছে এখোন যে আমাদের কোটি কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে কেউতো খোজঁও নেয়না।
অপর ব্যবসায়ী সেলিম বেপারী বলেন, আড়তে আলু নিলে বিকায় না। স্টোরে ৫০০ টাকা বস্তা বিক্রি হইতেছে। কিন্তু কম দাম হওয়াতে কৃষকের চালান না উঠায় কৃষক হিমাগারে আলু বিক্রি করতে আসে না তাই আমরাও আলু কিনতে পারি না বসে বসে লুডু খেলছি।
এ ব্যাপারে টঙ্গিবাড়ী কম্মাইড কোল্ড স্টোরের সুপারভাইজার ফরিদ আহমেদ বলেন ১ লক্ষ ২০হাজার বস্তা আমাদের হিমাগারের ধারণ ক্ষমতা। এ বছর এ পর্যন্ত মাত্র ৫ হাজার বস্তা ডেলিভারি হয়েছে। গত বছর এই সময়ে ৩০ হাজার বস্তার বেশি ডেলিভারি হয়েছিল।
তিনি আরো বলেন, আলুর যে অবস্থা যদি বিদেশ আলু বিক্রি না হয় তবে এবার অনেক আলু হিমাগাড়েই নষ্ট হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন, সামাজিক খাদ্য নিরাপত্তার জন্য যেমন আমরা ১০টাকা কেজি চাল দিয়ে থাকি এরূপ যদি আলুও দেওয়া যায় তাহলে আলুর দাম বৃদ্ধি পেতে পারে। উপরের মহল বিষয়টি চিন্তা ভাবনা করছে বলে আমি শুনেছি যদি বাস্তবায়ন হয় তাহলে আলুর দাম বৃদ্ধি পাবে।
তিনি আরো বলেন, আলু চাষ করতে গিয়ে ঋণ করা কৃষকরা এখন মহাজন ও ব্যাংকের ঋণ শোধ করতে পারছেন না। অনেকেই ঘরবাড়ি বিক্রি করে দিচ্ছেন। এই আর্থিক ক্ষতি তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ও পারিবারিক জীবনেও প্রভাব ফেলছে।
Comments