
শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবা ইউনিয়নের জিরোপয়েন্ট এলাকায় পদ্মা নদীর ভয়াবহ ভাঙনে আলম খাঁর কান্দি জামে মসজিদের দ্বিতল ভবন চোখের পলকে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) সকাল সাড়ে আটটার দিকে এই ভাঙনের ঘটনা ঘটে, যা স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী নুরউদ্দিন মাঝি বলেন, “সকালে শুনি মসজিদে ফাটল ধরেছে। আমরা ছুটে আসি, কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যে বিকট শব্দে পুরো মসজিদটি নদীতে ধসে পড়ে। এমন দৃশ্য দেখে আমরা স্তব্ধ হয়ে যাই।” স্থানীয়রা জানান, ভাঙন শুরু হওয়ার পর মসজিদে ফাটল দেখা দেয় এবং অল্প সময়ের মধ্যেই তা নদীতে তলিয়ে যায়, যার ফলে আশপাশের মানুষ আতঙ্কে ছুটোছুটি শুরু করেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের নভেম্বরে পদ্মা সেতু প্রকল্পের ইন্সট্রাকশন ইয়ার্ডের রক্ষাবাঁধ এলাকায় ভাঙন শুরু হয়। চলতি বছর ৭ জুন, ৭ জুলাই, ৯ জুলাই, ২৩ জুলাই, ৩১ জুলাই এবং সর্বশেষ ৫ আগস্ট—এই ছয় দফা ভাঙনে প্রায় ৭৫০ মিটার রক্ষাবাঁধ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এর ফলে আলম খাঁর কান্দি, ওছিম উদ্দিন মাদবরকান্দি, উকিল উদ্দিন মুন্সিকান্দি ও মাঝির ঘাট এলাকার ৩০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং ৫০টি বসতবাড়ি ইতোমধ্যে পদ্মায় হারিয়ে গেছে। এছাড়া শতাধিক পরিবার তাদের ঘরবাড়ি নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা বাদশা শেখ বলেন, “জিওব্যাগ ফেলেও ভাঙন ঠেকানো যাচ্ছে না। যেকোনো সময় পুরো বাজারটাই নদীতে চলে যেতে পারে। টেকসই বাঁধ না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।”
পানি উন্নয়ন বোর্ডের শরীয়তপুর জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মাদ তারেক হাসান বলেন, “পদ্মার প্রবল স্রোতের কারণে ভাঙন ঠেকানো কঠিন হচ্ছে। আমরা আপদকালীনভাবে কাজ করছি। স্থায়ী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য প্রকল্প প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে দ্রুত কাজ শুরু হবে।”
বর্তমানে ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে মাঝিরঘাট বাজারের ২০০টিরও বেশি দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং প্রায় ৬০০ পরিবার। স্থানীয়রা দ্রুত টেকসই ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
Comments