Image description

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ দলটির গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক অবস্থান তুলে ধরেছেন। তিনি জানিয়েছেন, বিএনপি র‌্যাংকিং পদ্ধতির পরিবর্তে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন নিয়ে সংসদে আলোচনা করতে আগ্রহী। দলটির মতে, সাংবিধানিক সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ নির্বাহী আইনের মাধ্যমে হওয়া উচিত।

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের ২১তম দিনের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে তিনি আরও বলেন, বিএনপি সংসদে নারী সংরক্ষিত আসনের পক্ষে রয়েছে। একইসঙ্গে, তারা জুলাই সনদের খসড়াকে ইতিবাচকভাবে দেখছে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গে: তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন নিয়ে সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, নীতিগতভাবে আমরা সবাই একমত। তবে গঠন পদ্ধতি নিয়ে কিছুটা মতভেদ রয়েছে। কমিশনসহ বিভিন্ন দলের পক্ষে একটি বাছাই কমিটির কথা হয়েছে। এতে প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা, স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার থাকবেন। তাতেও সিদ্ধান্ত না হলেও ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দল ৫ জন করে ১০ জন ও অন্যান্য দল ২ জনের নাম প্রস্তাব করবেন। এর মধ্যে চারজন প্রস্তাব করলে হবে। আর এখানেও সমাধান না হলে র‌্যাংকিং পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে।

আমরা এ জায়গায় একমত হতে পারিনি। আমরা চাই, এটি সর্বশেষ অপশন হিসেবে সংসদের ওপর ছেড়ে দেওয়া হোক। সংসদে আলোচনা হবে। এ নিয়ে নাগরিকরা মতামত দিতে পারবেন। সভা-সেমিনার হবে।

সেখানেও সমাধান না হলে আমরা ত্রয়োদশ সংশোধনীর পক্ষে। তবে এক্ষেত্রে সর্বশেষ রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণের সুযোগ থাকবে না।

চার প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ নির্বাহী আইনের পক্ষে: সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলো সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করতে চায় না বিএনপি। তিনি বলেন,  সংবিধানকে আমরা আর ভারী করতে চাই না। আমরা মনে করি, আইনিভাবে হলে জবাবদিহি নিশ্চিত হবে।

সবকিছু বাছাই করতে গেলে দেখা গেলো সংবিধান সংশোধন করা যাবে না। এতে করে অনেক কাজ সহজে করা যাবে না। গুডস গভর্নস করা সম্ভব হবে না। আমরা নির্বাহী বিভাগকে চেক অ্যান্ড ব্যালেন্সে নিয়ে আসতে চাই। এতে এক প্রতিষ্ঠান আরেক প্রতিষ্ঠানের প্রতি নাক গলাতে পারবে না।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনকে একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার পক্ষে। তাই এর নিয়োগ সাংবিধানিকভাবে করার পক্ষে বিএনপি।

জুলাই সনদের খসড়ায় বিএনপি একমত: সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, জুলাই সনদের খসড়ায় যে অঙ্গীকারের বিষয়ে বলা হয়েছে, আমরা একমত সেখানে। কোনও ভাষা বা শব্দগত সংশোধনী থাকলে আমরা দেবো। আর দুই বছরের বাস্তবায়নের বিষয়েও বিএনপি একমত।

প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ: তিনি বলেন, দশ বছরের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে থাকতে পারবেন না। সে প্রস্তাব প্রথম আমরা দিয়েছি। এত কিছুর পর স্বৈরাচারী শাসন কায়েম হবে তা মনে হয় না। এটি সবাই মেনে নিয়েছি। তাই আমরা সব বিষয়ে দ্বিমত সেটা বলা ঠিক নয়।

নারী আসন নিয়ে অবস্থান: তিনি বলেন, আমরা চাই সাংবিধানিকভাবে নারীর ক্ষমতায়ন করতে। আমরা নারীদের সংরক্ষিত আসনের পক্ষে। এক্ষেত্রে ১০০ আসন করার প্রস্তাব দিয়েছি। তবে তা আনুপাতিক হারে আগের মতো হতে হবে।

অনেকে সরাসরি নির্বাচন করার কথা বলেছে। আমরা মনে করি, আমাদের দেশের বাস্তবতায় নারীদের সরাসরি নির্বাচনে অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তারপরও আমরা বলেছি, ৩০০ আসনের মধ্যে এবার ৫ ও আগামীতে ১০ শতাংশ নারীকে মনোনয়ন দেওয়া যেতে পারে।

ন্যায়পাল নিয়ে মন্তব্য: সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ১৯৮০ সালে ও ২০০৫ সালে ন্যায়পাল করা হয়েছিল। কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়নি। জাতীয় সনদে ন্যায়পালের কথা থাকতে হবে। এর আইন ও কার্যকরী করা নিয়ে বিস্তারিত থাকতে হবে। এর জন্য সচিবালয় করতে হবে। সেটিও আইনের মাধ্যমে করতে হবে।

ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবি উল্লাহ, এলডিপির মহাসচিব অ্যাডভোকেট রেদোয়ান আহমেদ, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ।