
রাজশাহীর বাঘায় একটি বিদ্যালয়ের ছুটিতে থাকা প্রধান শিক্ষক এবং তাঁর অনুপস্থিতিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রধান শিক্ষকসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। বুধবার (২৯ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে উপজেলার মহদীপুর-হিলালপুর মাধ্যমিক বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক আবদুল খালেকের বিরুদ্ধে প্রায় সাড়ে ছয় মাস আগে নিয়মবহির্ভূতভাবে বিদ্যালয় পরিচালনাসহ নিয়োগ–বাণিজ্য করে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দেওয়া হয়। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দুই মাসের ছুটি নেন প্রধান শিক্ষক আবদুল খালেক। তাঁর অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আবদুল ওয়াদুদ।
স্থানীয় সূত্রের ভাষ্য, বুধবার সকালে আবদুল খালেক তাঁর লোকজন নিয়ে বিদ্যালয়ে আসবেন এমন খবরে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজন মানববন্ধন করেন। এ সময় প্রধান শিক্ষক আবদুল খালেক তাঁর সমর্থকদের নিয়ে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে যান। তাঁকে বাধা দিলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে আহত হন প্রধান শিক্ষক আবদুল খালেক (৫০), তাঁর পক্ষের আনোয়ার হোসেন (৪০), আমানউল্লাহ হক (৩৫), এনামুল হক (৪২) ও নেক আলম (৫৫)।
অপর পক্ষের আহত ব্যক্তিরা হলেন শিক্ষক জাকির হোসেন (৪৫), আয়া বানুয়া আরা বেগম (৪০), পিয়ন আবু জার (৩৫), শিক্ষার্থী সুমাইয়া খাতুন (১৬), স্থানীয় বাসিন্দা রহিদুল ইসলাম (৪৭), রাহাবুল ইসলাম (৩৫), আকাশ আলী (২৫), বজলুর রহমান (৫৮), জীবন আলী (২৭), মারুফ আলী (২৩), সাগর আলী (২০), রাজু আহম্মেদ (৩০), রুবেল হোসেন (৩০) ও সম্রাট আলী (২০)।
আহত ব্যক্তিদের মধ্যে আমানউল্লাহ, আবদুল খালেক ও আকাশ আলীকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মারুফ আলী, সাগর আলী, রাজু আহম্মেদ, আবু জার, জাকির হোসেন, বানু আরাসহ কয়েকজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন এবং অন্যরা বাঘা ও চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন। আহত ব্যক্তিরা উপজেলার মহদীপুর-হিলালপুর গ্রামের বাসিন্দা। স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, সংঘর্ষের সময় উভয় পক্ষের হাতে লাঠিসোঁটা, চায়নিজ কুড়াল ও হাতুড়ি দেখা গেছে।
বুধবারের সংঘর্ষের ঘটনার বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবদুল ওয়াদুদের দাবি, বিদ্যালয়ে প্রথম ক্লাস চলাকালে প্রধান শিক্ষক আবদুল খালেকের নেতৃত্বে ২৫–৩০ জন বহিরাগত লোক দেশীয় অস্ত্র হাতে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন। তাঁদের হামলায় শিক্ষক জাকির হোসেন, একজন আয়া, একজন পিয়ন ও একজন শিক্ষার্থী আহত হন। এ সময় স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এলে তাঁদেরও মারধর করে আহত করা হয়।
প্রধান শিক্ষক আবদুল খালেক চিকিৎসাধীন থাকায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া যায়নি।
আত্মসম্মান রক্ষায় আবদুল খালেক দুই মাসের ছুটি নেন জানিয়ে ছেলে ফয়সাল আহমেদ বলেন, যেহেতু আইনগতভাবে তাঁর বাবাকে চাকরিচ্যুত করা হয়নি, তাই তিনি শিক্ষক হিসেবে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে যান। এ সময় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্থানীয় কয়েকজন বাধা দেন। পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে প্রতিপক্ষরা ক্লাস বাদ দিয়ে বিদ্যালয়সংলগ্ন মহাসড়কে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন। পরে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। তাঁদের হাতে দেশীয় অস্ত্র ছিল বলে দাবি ফয়সাল আহমেদের।
এ বিষয়ে বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আ ফ ম আছাদুজ্জামান বলেন, এ ঘটনায় দুই পক্ষের লোকজন আহত হয়েছেন। অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিষয়টি নজরে আনা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাম্মী আক্তার বলেন, যাঁরা এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Comments