
চট্টগ্রামের রাউজানে বিএনপির দুপক্ষে তুমুল সংঘর্ষ হয়েছে। এতে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার ছাড়াও তার পক্ষের আরো অনেকে আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) বিকেলে রাউজান পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সত্তারঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
খোন্দকারের অনুসারীরা জানিয়েছেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষের লোকজনই তাদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, সাবেক রাষ্ট্রদূত ও সংসদ সদস্য গোলাম আকবর খোন্দকার সুলতানপুরে উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মহিউদ্দীন আহমেদের কবর জিয়ারতে যাচ্ছিলেন। এ সময় বিপরীত দিক থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারীরা গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির গণসমাবেশ উপলক্ষে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা নিয়ে সত্তারঘাট এলাকায় পৌঁছান।
মুখোমুখি অবস্থান থেকে মুহূর্তেই দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। খোন্দকারের গাড়িবহরে থাকা একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় এবং তার গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। এ সময় গোলাম আকবর খোন্দকার ছাড়াও তার সঙ্গে থাকা বহু নেতাকর্মী আহত হন বলে জানা গেছে।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমরা গত ১৭ বছর এলাকায় থাকতে পারিনি। জেল জুলুমে অতিষ্ট ছিলাম। আজকে আমরা উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও রাউজান উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মহিউদ্দীন আহমেদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে কবরস্থানে যাচ্ছিলাম। ঠিক তখনই আমাদের ওপর হামলা হয়। আমাদের কবর জিয়ারত করতে যেতে দেয়া হয়নি।’
তিনি জানান, গোলাম আকবর খোন্দকারসহ বেশ কয়েকজন বিএনপি ও যুবদলের নেতারা গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদের বহরে থাকা মোটরসাইকেল ছিনতাই করে নিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে।
গোলাম আকবর খোন্দকারের ব্যক্তিগত সহকারী অর্জুন কুমার নাথ বিকেল ছয়টার দিকে জানিয়েছেন, গোলাম আকবর খোন্দকারকে লক্ষ্য করেই গুলি করা হয়েছিল। গলার পাশ দিয়ে গুলি চলে গেছে! রক্তপাত হচ্ছে। তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে, ঘটনার পরপরই গোলাম আকবর খোন্দকার অনুসারীরা ঘটনাস্থলে একটি বিক্ষোভ মিছিল করেন। বর্তমানে রাউজানে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা দেখা যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভুঁইয়া বলেন, ‘একপক্ষ কবর জিয়ারত করতে যাচ্ছিল, অন্যপক্ষ শোভাযাত্রায় ছিল। সত্তারঘাট এলাকায় গোলাম আকবর খোন্দকার তার অনুসারীদের গাড়িবহর নিয়ে যাওয়ার সময় দুপক্ষ মুখোমুখি হয়। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।’
হামলার পর গোলাম আকবর খোন্দকার বলেন, ‘আমি আগেই সংবাদ পেয়েছিলাম তারা হামলা করবে। কিন্তু বিশ্বাস করিনি। পরে একটি নোট পেলাম, গিয়াস উদ্দিনের নির্দেশে আজকে সারাদিন সত্তারঘাট থেকে মুন্সিঘাটা পর্যন্ত মিছিল করা হবে। চিন্তা করলাম এটা একটা অশুভ পরিকল্পনা।’
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আগেই জানানো হয়েছিল জানিয়ে খোন্দকার বলেন, ‘আমি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানালাম, তারা আমাকে কনফার্ম করলো, কোনো অসুবিধা নেই, আমরা আছি। তারপর আমরা আসছি। কিন্তু আমরা যখন সত্তারঘাট ব্রিজ ক্রস করলাম; তখন ৫০-৬০ জন লোক ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করল। লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা করল।’
সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন। তিনি বিকেলে ফোনে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি গত এক সপ্তাহ ধরে অসুস্থ। ঘটনার বিষয়ে কিছুই জানি না। ঘুমে ছিলাম।’
তবে তার অনুসারী রাউজান উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফিরোজ আহমেদ বলেন, ‘জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উদ্যাপন কর্মসূচি বানচাল করতে পরিকল্পিতভাবে হামলা করা হয়েছে। ফটিকছড়ি থেকে সন্ত্রাসী ভাড়ায় এনে গোলাম আকবরের লোকজন হামলা চালিয়েছে।’
ওই ঘটনায় আহতদের মধ্যে কয়েকজন হলেন, রাউজান উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাসিম উদ্দিন চৌধুরী, গোলাম আকবর খোন্দকারের ব্যক্তিগত সহকারী অর্জুন কুমার নাথ ও এপিএস আসিকুর রহমান, যুবদল নেতা সাজ্জাদ হোসেন, বিএনপি নেতা আওরঙ্গজেব সম্রাট, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি নাঈম উদ্দিন মিনহাজ, মোহাম্মদ হুমায়ুন প্রমুখ।
উল্লেখ্য, রাউজানে গত বছরের ৫ আগস্টের পর সহিংসতায় মোট ১৩টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ১০টি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। বিএনপির দুপক্ষে সংঘর্ষ হয় শতাধিকবার। তিন শতাধিক মানুষ এসব ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হন।
Comments