Image description

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর একের পর এক হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও অন্তত ৬১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে অন্তত দুজন ত্রাণপ্রার্থীও রয়েছেন, যারা খাদ্য সহায়তার জন্য বিভিন্ন বিতরণকেন্দ্রে অপেক্ষা করছিলেন। এই হতাহতের ঘটনা গাজার মানবিক সংকটকে আরও গভীর করছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) গাজার উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত শাতি শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ২৩ জন নিহত এবং বহু মানুষ আহত হয়েছেন বলে স্থানীয় মেডিকেল সূত্রগুলো আল জাজিরাকে নিশ্চিত করেছে।

এরই মধ্যে গাজার দক্ষিণাঞ্চলে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) পরিচালিত একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের কাছে অন্তত দুইজন নারী নিহত এবং ৩০ জন আহত হয়েছেন। 

জাতিসংঘ জানিয়েছে, গত মে মাসের শেষ দিকে জিএইচএফ-এর কার্যক্রম শুরুর পর থেকে গাজায় ত্রাণ পেতে গিয়ে অন্তত ৮৭৫ জন মারা গেছেন।

ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, তাদের দলগুলো ভোর থেকে অন্তত ১৮ জন শহীদ ও ডজনখানেক আহতকে উদ্ধার করেছে, যাদের অধিকাংশই গাজার উত্তরাঞ্চলে ইসরায়েলি বিমান হামলায় হতাহত হয়েছেন। অন্যদিকে, ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী গাজার উত্তরাঞ্চলের ১৬টি এলাকার ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক স্থানান্তরের নির্দেশ জারি করেছে, যার মধ্যে জাবালিয়াও রয়েছে। এতে সেখানকার বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে পালাতে শুরু করেছেন।

আল জাজিরার মোয়াত আল-কাহলুত ঘটনাস্থল থেকে জানান, মানুষ তাদের গাড়ি ও গাধা ব্যবহার করে এলাকা ছাড়ছে এবং সবাই অজানা গন্তব্যের দিকে যাচ্ছে। তারা জানে না কোথায় যাবে এবং পরিবহনের জন্য জ্বালানির অভাবে চরম সংগ্রাম করছে। পরিস্থিতি অত্যন্ত বিশৃঙ্খল এবং স্থানীয়রা চরম আতঙ্কের মধ্যে আছেন।

এর মধ্যেই ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য কাজ করা জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ সতর্ক করে বলেছে, অবরুদ্ধ গাজায় শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির হার উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। সিভিল ডিফেন্স সংস্থা অনুযায়ী, গাজা শহরের বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের তাঁবুতে ইসরায়েলের হামলায় আরও ছয়জন নিহত হয়েছেন।

ইউএনআরডব্লিউএ'র গাজার স্বাস্থ্য দলগুলো জানিয়েছে, গত চার মাসেরও বেশি সময় ধরে ইসরায়েলি অবরোধ তীব্র হওয়ার পর থেকে অপুষ্টির হার বাড়ছে। ইউএনআরডব্লিউএ'র প্রধান জেনারেল ফিলিপ লাজারিনি বলেছেন, ২০২৪ সাল থেকে পরীক্ষা করা প্রতি ১০ জন শিশুর মধ্যে একজন অপুষ্টিতে ভুগছে। সংস্থাটি এক বিবৃতিতে গাজায় অপুষ্টিকে 'ইঞ্জিনিয়র্ড এবং মানবসৃষ্ট' বলে আখ্যায়িত করেছে।

এই চরম মানবিক সংকটের মধ্যেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ব্রাসেলসে বৈঠক করেছেন গাজায় মানবিক পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করতে। মঙ্গলবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান কাজা কাল্লাস ১০টি সম্ভাব্য বিকল্প প্রস্তাব করেছেন। এসব প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে পুরো চুক্তি স্থগিত করা, বাণিজ্য সম্পর্ক সীমিত করা, ইসরায়েলি মন্ত্রীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা, অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা জারি করা এবং ভিসামুক্ত ভ্রমণ বন্ধ করা।

তবে গাজায় চলমান ধ্বংসযজ্ঞ নিয়ে ক্রমবর্ধমান ক্ষোভ সত্ত্বেও, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কীভাবে পদক্ষেপ নেওয়া হবে সে বিষয়ে ইইউ দেশগুলো বিভক্ত ছিল এবং মঙ্গলবারের বৈঠকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে ঐকমত্য হয়নি।