Image description

গত ১০ দিনের অবিরাম বর্ষণে সাতক্ষীরা জেলার বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে করে আমন বীজতলা, আউশ ধান, সবজি ক্ষেত ও মৎস্য ঘেরগুলো তলিয়ে যাওয়ায় কৃষিখাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষ করে সাতক্ষীরা পৌরসভাসহ সদর, তালা, কলারোয়া, দেবহাটা এবং আশাশুনি উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ভয়াবহ জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছে।

সাতক্ষীরা আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ১০ দিনে জেলায় ৩৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় (বুধবার সকাল ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) ৪২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। টানা এই বৃষ্টিতে সাতক্ষীরা পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের অধিকাংশ নিম্ন এলাকার দোকানপাট, বসতবাড়ি, রান্নাঘর এবং রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে গেছে। টিউবওয়েল তলিয়ে যাওয়ায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে, এবং স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

ইটাগাছা বিলপাড়ার বাসিন্দা নাজমুল হাসান অভিযোগ করে বলেন, "ঘের মালিকরা বিলে পানি আটকে রাখায় এবং বাইপাসের স্লুইস গেট বন্ধ থাকায় পানি খাল দিয়ে নদীতে নামতে পারছে না। ফলে সবখানে শুধু পানি আর পানি।" 

বদ্দিপুর কলোনির গৃহবধূ শাহানারা বেগম জানান, "১০ বছর ধরে এমন হচ্ছে, কিন্তু কোনো সমাধান নেই। এবার রান্নাঘরে পানি ঢুকে হাড়ি-পাতিল নষ্ট হচ্ছে, পোকা-মাকড় ঘরে ঢোকায় রাতে ঘুমানো যাচ্ছে না।"

বন্যা পরিস্থিতি শহরের স্বাভাবিক জনজীবনকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করেছে। শহরের পুলিশ লাইন্সসহ শতাধিক স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা হাঁটু থেকে কোমর সমান পানিতে তলিয়ে গেছে, যার ফলে শিক্ষা কার্যক্রম কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। চলমান এইচএসসি এবং অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষাগুলোও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ যেন এক বিশাল জলাশয়ে পরিণত হয়েছে, যেখানে শিক্ষার্থীদের কাদা ও পচা পানির মধ্য দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। 

কালীগঞ্জের মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুব্রত বৈদ্য জানান, জলাবদ্ধতার কারণে বিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় হাঁটাচলা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মনির হোসেন বলেন, এক সপ্তাহের টানা বৃষ্টিতে আমন বীজতলা, আউশ ধান এবং বিভিন্ন সবজি ক্ষেত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে বরবটি, শিম, শসা সহ অন্যান্য সবজি ক্ষেত এখনো পানিতে নিমজ্জিত। কৃষি বিভাগ তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করতে পারেনি, তবে পানি সরে গেলে ক্ষয়ক্ষতির সঠিক হিসাব করা সম্ভব হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শোয়াইব আহমাদ জানিয়েছেন, অতিবৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। পানি নিষ্কাশনের জন্য ইতোমধ্যেই ইটাগাছা বিলের ঘের মালিকদের তিন দিনের মধ্যে অবৈধ নেটপাটা সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও সাতক্ষীরা খালগুলো খনন করা হয়েছে এবং শহরের প্রাণ সায়ের খাল, বেতনা নদী ও কুঞ্জুর স্লুইসগেট খুলে দেওয়া হয়েছে। তিনি আশা করছেন, দ্রুতই জলাবদ্ধ এলাকার পানি নিষ্কাশিত হবে।

তবে জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ বলেছেন, শুধু উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে জলাবদ্ধতার সমাধান সম্ভব নয়। এ জন্য স্থানীয়দের অংশগ্রহণে বাঁধ নির্মাণসহ সমন্বিত দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।