
ভবিষ্যতে আপনি কতদিন বাঁচবেন এবং কতটা সুস্থভাবে বার্ধক্যে পৌঁছাবেন, তা হয়তো এক ফোঁটা রক্ত বা লালার মাধ্যমেই জানা সম্ভব হবে! গবেষকরা এমন একটি যুগান্তকারী প্রযুক্তি তৈরি করেছেন বলে দাবি করেছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ‘ইনট্রিনসিক ক্যাপাসিটি’ বা অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা (আইসি) নামে একটি ধারণা উপস্থাপন করেছে, যা মানসিক ও শারীরিক সামর্থ্যের সম্মিলিত রূপ। কারো চিন্তা, স্মৃতি, চলাফেরা, শ্রবণ বা দৃষ্টিশক্তি সবকিছুই এই সক্ষমতার অংশ। আগে আইসি নির্ধারণ করতে প্রয়োজন হতো উন্নত যন্ত্রপাতি ও প্রশিক্ষিত কর্মী। তবে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, রক্ত বা লালার নমুনায় থাকা ডিএনএ মিথাইলেশন বিশ্লেষণ করেই এখন এই সক্ষমতা মাপা সম্ভব। এই পরীক্ষাকে বলা হচ্ছে ডিএনএএম আইসি (DNAm IC) টেস্ট।
নেচার এইজিং সাময়িকীতে প্রকাশিত এই গবেষণায় বলা হয়েছে, আইসি ক্লক ব্যবহার করে বার্ধক্য পর্যবেক্ষণ করা ও প্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে। গবেষকেরা মনে করছেন, এটি ভবিষ্যতে জীবনকাল ও স্বাস্থ্যকাল উভয়ই নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত: রাশ ইউনিভার্সিটির ‘ইনস্টিটিউট ফর হেলদি এইজিং’-এর চিকিৎসক থমাস এম. হল্যান্ড বলেন, এটি শুধুমাত্র আপনার বয়স কত, তা নয়—আপনার দেহ আসলে কতটা সুস্থভাবে বার্ধক্যে যাচ্ছে, সেটি জানায়। এটি একটি বড় বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি। নিউট্রিশন থেরাপিস্ট এলিনা রোল্টের মতে, ডিএনএএম আইসিপরীক্ষাটি শুধুমাত্র বয়স নয়, বরং শরীরের কর্মক্ষমতাও বুঝতে সাহায্য করে। এটি প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যব্যবস্থার জন্য নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে।
গবেষণার ফলাফল: ২০ থেকে ১০২ বছর বয়সী ১,০১৪ জনের তথ্য বিশ্লেষণ করে এই গবেষণা চালানো হয়। দেখা গেছে যাদের ডিএনএএম আইসি স্কোর বেশি, তারা গড়পড়তায় ৫.৫ বছর বেশি বাঁচেন। তাদের ফুসফুসের কার্যক্ষমতা, হাঁটার গতি এবং হাড়ের ঘনত্ব বেশি ছিল। তারা নিজেদের সুস্থ বলেই মনে করতেন।
আইসি বাড়ানোর উপায়: বার্ধক্যের সঙ্গে সঙ্গে সবারই আইসি কমে যায়। তবে কিছু অভ্যাস এই পতন কমিয়ে দিতে পারে:
ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার (যেমন: সামুদ্রিক মাছ) খাওয়া
চিনি নিয়ন্ত্রণে রাখা
ভেজালহীন খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়াম
মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ ও সামাজিক সম্পৃক্ততা
এই অভ্যাসগুলো ডিএনএ মিথাইলেশন এবং ইমিউন সিস্টেম ভালো রাখতে সহায়তা করে, যা সরাসরি আইসি উন্নয়নে কাজ করে।
এক ফোঁটা রক্ত বা লালা পরীক্ষার মাধ্যমে বার্ধক্যের গতি ও স্বাস্থ্যের ভবিষ্যৎ জানা যাবে। এটি আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের এক যুগান্তকারী অগ্রগতি। ডিএনএএম আইসি টেস্ট শুধু বয়সের সংখ্যা নয়, বরং জীবনের গুণগত মান ও দীর্ঘস্থায়ীতার আভাস দেয়। এই প্রযুক্তি একদিকে যেমন ভবিষ্যতের রোগ প্রতিরোধে ব্যক্তিকেন্দ্রিক চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে তুলবে, অন্যদিকে আমাদের সকলকে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে উদ্বুদ্ধ করবে।
সূত্র: মেডিকেল নিউজ টুডে
Comments