
হিজরি নববর্ষের প্রথম মাস মহররম মুসলিম উম্মাহর কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ইসলামী শরিয়তে এই মাসকে বিশেষভাবে সম্মানিত ও বরকতময় মাস হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে এর অসাধারণ ফজিলত বর্ণিত আছে। মহররম মাস শুধু একটি নতুন বছরের সূচনা নয়, বরং এটি ইবাদত, তওবা এবং ক্ষমা প্রার্থনার এক সুবর্ণ সুযোগ। এই মাসে নফল রোজা ও ইস্তিগফারের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে, যা মুমিনদের জন্য আল্লাহর নৈকট্য লাভের এক অনন্য পথ খুলে দেয়। আসুন, এই সম্মানিত মাসের বিশেষ কিছু ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।
পবিত্র কোরআনে মহররমকে 'আরবাআতুন হুরুম' বা সম্মানিত চার মাসের অন্যতম হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এই মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধ ছিল, যা এর পবিত্রতা ও গুরুত্বকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহররম মাসের রোজাকে রমজানের পর সবচেয়ে উত্তম রোজা হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, “রমজানের পর সবচেয়ে উত্তম রোজা হচ্ছে- আল্লাহর মাস ‘মুহররম’-এর রোজা। আর ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে উত্তম নামাজ হচ্ছে- রাত্রিকালীন নামাজ।” (সহিহ মুসলিম, ১১৬৩)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহররম মাসকে 'শাহরুল্লাহ' বা আল্লাহর মাস বলেও অভিহিত করেছেন। যদিও সকল মাসই আল্লাহর, তবে এই নামকরণ মহররমের বিশেষ মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্যকে নির্দেশ করে। যেমনভাবে পৃথিবীর সব ঘর আল্লাহর হওয়া সত্ত্বেও কেবল কা'বাকে 'বাইতুল্লাহ' বা আল্লাহর ঘর বলা হয়। এই বিশেষ সম্পর্ক মহররম মাসে অধিক রোজা রাখার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে।
মহররম মাসের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত হলো, এই মাসের সঙ্গে তওবা কবুলের ইতিহাস জড়িত। একটি হাদিসে এসেছে, আলী (রা.)-কে এক ব্যক্তি রমজানের পর রোজা রাখার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছিলেন, “রমজানের পর যদি তুমি রোজা রাখতে চাও, তবে মুহররম মাসে রাখ। কারণ, এটি আল্লাহর মাস। এ মাসে এমন একটি দিন আছে, যে দিনে আল্লাহ তাআলা একটি জাতির তওবা কবুল করেছেন এবং ভবিষ্যতেও অন্যান্য জাতির তওবা কবুল করবেন।” (জামে তিরমিজি, হাদিস: ১/১৫৭)
মহররমের রোজার মধ্যে আশুরার (১০ই মহররম) রোজার ফজিলত আরও বেশি। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, “আমি আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রমজান ও আশুরায় যেরূপ গুরুত্বের সঙ্গে রোজা রাখতে দেখেছি অন্য সময় তা দেখিনি।” (সহিহ বুখারি: ১/২১৮)
এই মাসটি মুসলিম উম্মাহর জন্য ইবাদত-বন্দেগি, আত্মশুদ্ধি এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের এক অসাধারণ সুযোগ। এই সময়ে বেশি বেশি নফল রোজা রাখা এবং কৃত গুনাহের জন্য তওবা-ইস্তিগফার করা উচিত।
Comments