
অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বন্যার আশঙ্কা বাড়ছে। জ্যৈষ্ঠের শুরুতে দু-তিন দিন ধরে ঢাকায় দফায় দফায় বৃষ্টি হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানেও কমবেশি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। গত বছর বন্যার কথা স্মরণ করে আতঙ্কিত প্রহর পার করছে। ওই বছরের বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহতার কারণে দুর্গম এলাকায় আটকে পড়েছিল অজস মানুষ।
ঘরের চালের ওপরে বসে ত্রাণের আশায় কোথাওবা অনাহারে অর্ধাহারে প্রহর গুনেছে মানুষ। এবারেও বন্যার আশঙ্কা বাড়ছে। থেমে থেমে ভারি বৃষ্টি এবং সীমান্ত নদীতে পাহাড়ি ঢলের কারণে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। শঙ্কায় দিন কাটছে মানুষের- ইতোমধ্যে নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে।
প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল, দেখা দিয়েছে নদীভাঙন। এমন পরিস্থিতিতে শেরপুর, নেত্রকোনা, সিলেট ও সুনামগঞ্জে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বন্যার শঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদরা। মৌসুমি বায়ুর অগ্রগতি ও পার্শ্ববর্তী ভারতের মেঘালয় ও আসামে টানা ভারি বর্ষণের প্রেক্ষাপটে সিলেট বিভাগে অগ্রিম বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইচডি গবেষক ও আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ এক পূর্বাভাসে জানিয়েছেন- ২৭ থেকে ৩১ মে’র মধ্যে একটি ঘূর্ণাবর্ত সৃষ্টি হতে পারে এবং জুনের প্রথম দশদিনজুড়ে সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সিলেট, রংপুর ও চট্টগ্রাম বিভাগে মাঝারি থেকে অতিভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। এর ফলে ৫ থেকে ১৫ জুনের মধ্যে এসব অঞ্চলে বন্যা দেখা দিতে পারে। এ মাসের শেষ দিকে একটি লঘুচাপ তৈরি হতে পারে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
লঘুচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। ভারতের মেঘালয় ও আসামে টানা ভারি বর্ষণের কারণে সিলেটের সীমান্তবর্তী নদীগুলোতে ঢল নেমেছে। বিশেষ করে সীমান্তের গোয়াইনঘাট উপজেলার পিয়াইন ও ডাউকি নদীতে পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পিয়াইনের পানি উপচে প্রবেশ করছে লোকালয়ে। সুরমা নদীর কানাইঘাট সীমান্ত এলাকার অবস্থাও একই। দুদিনের প্রবল বর্ষণ এবং উজানের পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বাড়ছে। পাহাড়ি নদী চেল্লাখালীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে।
মহারশির নদীর দীঘিরপাড় বাঁধের কিছু অংশ ভেঙে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পাউবোর আশঙ্কা, বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে জেলার সব পাহাড়ি নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। কুড়িগ্রামেও টানা ভারি বর্ষণ এবং উজানের ঢলে তিস্তা, জিঞ্জিরাম, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বেড়েছে। এদিকে ভারি বর্ষণে রংপুর নগরীর শ্যামাসুন্দরী খাল উপচে আশপাশের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে, ভারি বৃষ্টিতে গতকাল ময়মনসিংহ শহরের বেশির ভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। এক্ষেত্রে লক্ষণীয়, ভারি বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে চলমান বন্যা আশঙ্কা আরও বাড়তে পারে। বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হতে পারে।
বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশ, দুর্যোগকে এড়ানোর কোনো উপায় নেই। কিন্তু এ কথা ঠিক যে, যথাযথ প্রস্তুতি ও উদ্যোগ গ্রহণের মধ্য দিয়ে ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব। ফলে, যখন এমনটি জানা যাচ্ছে যে, ভারি বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে বন্যার আশঙ্কা বাড়তে পারে। বড় কোনো বিপদের পূর্বেই সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নেয়ার বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে উদ্যোগী হতে হবে।
সামগ্রিকভাবে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বাত্মক পদক্ষেপ অপরিহার্য বলেই প্রতীয়মান হয়। বন্যা ভয়াবহ রূপ নিলে তা কতটা জনজীবনকে বিপর্যস্ত করতে পারে সেটি এড়ানোর সুযোগ নেই। ফলে সৃষ্ট আশঙ্কাকে সামনে রেখে যথাযথ প্রস্তুতি জরুরি। রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠন ও বিত্তবানদের সংকট মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে- তবেই ক্ষতির পরিমাণটা কমানো সম্ভব হবে বলে- আমাদের প্রত্যাশা।
Comments