Image description

ভারতের গুজরাটে আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনগামী এয়ার ইন্ডিয়ার এআই১৭১ ফ্লাইটটি গত ১২ জুন উড্ডয়নের অল্প সময়ের মধ্যেই একটি ছাত্রাবাসের ওপর বিধ্বস্ত হয়। প্রায় ২৭০ জনের প্রাণহানি ঘটানো এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতের বিমান দুর্ঘটনা তদন্ত ব্যুরো (এএআইবি)। শনিবার (১২ জুলাই) প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে ককপিটের অডিও রেকর্ডারে ধরা পড়া কথোপকথন দুর্ঘটনার কারণকে আরও রহস্যময় করে তুলেছে।

এএআইবির তথ্য অনুযায়ী, বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনারটি উড্ডয়নের প্রস্তুতি নিচ্ছিল, ঠিক তখনই হঠাৎ করে ইঞ্জিনের ফুয়েল কাটঅফ সুইচ চালু হয়ে যায়। এর ফলে প্লেনের উভয় ইঞ্জিনে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়, যার ফলে পাওয়ার, থ্রাস্ট এবং লিফট সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়। প্লেনটি উপরে উঠতে না পেরে অল্প সময়ের মধ্যেই মাটিতে আছড়ে পড়ে।

প্লেনের ককপিট ভয়েস রেকর্ডারে (সিভিআর) যে কথোপকথন শোনা গেছে, তা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে। অডিওতে শোনা যায়, এক পাইলট অন্যজনকে প্রশ্ন করছেন—"তুমি কি ফুয়েল কেটে দিয়েছো?" জবাবে অপর পাইলট তৎক্ষণাৎ বলেন, "না, আমি কিছু করিনি।" ঠিক সেই মুহূর্তেই প্লেনটির ইঞ্জিন শক্তি হারাতে শুরু করে। তবে প্রাথমিক প্রতিবেদনে স্পষ্ট নয়, কে প্রথমে এই প্রশ্ন করেছিলেন এবং কে উত্তর দিয়েছিলেন।

অ্যারোনটিক্স বিশেষজ্ঞ সাজ আহমেদ বলেন, "এনহ্যান্সড এয়ারবোর্ন ফ্লাইট রেকর্ডার (ইএএফআর) থেকে প্রায় ৫০ ঘণ্টার ফ্লাইট ডেটা বিশ্লেষণ করা হয়েছে, যা প্লেনের পতন কীভাবে ঘটেছে তা বুঝতে সাহায্য করেছে।" তবে তিনি সতর্ক করে দেন, "এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় ধোঁয়াশা হচ্ছে—কে বা কীভাবে ফুয়েল সুইচ সক্রিয় হয়েছিল। এটি না বুঝলে আমরা নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারি না।"

তদন্ত এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলেও, অনেকেই ধারণা করছেন যান্ত্রিক ত্রুটির চেয়েও ‘হিউম্যান ফ্যাক্টর’ বা মানবিক ভুল এই দুর্ঘটনার পেছনে প্রধান ভূমিকা রাখতে পারে। ককপিটের এই কথোপকথন সেই ধারণাকে আরও জোরালো করেছে।

এএআইবি জানিয়েছে, এই তদন্ত আরও কয়েক মাস ধরে চলবে। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ এবং কার গাফিলতি ছিল, তা নিশ্চিত করে বলা হবে। বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে শেষ মুহূর্তের ককপিট অডিও বিশ্লেষণের ওপর। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যতক্ষণ না নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে ককপিটে কে কী করেছিলেন, ততক্ষণ এই দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ পুরোপুরি জানা যাবে না। তবে একটি বিষয় স্পষ্ট—ফুয়েল কাটঅফ সুইচ চালু হয়ে যাওয়ার কারণই এই মর্মান্তিক বিপর্যয়ের কেন্দ্রবিন্দু।