Image description

অদম্য মনোবল, ইচ্ছা শক্তি, সাহস নিয়ে পায়ে হেঁটে সাগর থেকে শিখরে দীর্ঘতম পথ, দ্রুততম সময়ে, সবচেয়ে কম সময়ে পায়ে হেঁটে ৮৪ দিনে কক্সবাজার ইনানী সমুদ্র সৈকত থেকে এভারেস্টের সর্বোচ্চ চূড়ায় বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকা তুলে দুঃসাহসিক অভিযান সি টু সামিট শেষ করলেন গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের বাগচালা এলাকার মৃত খবির উদ্দিনের বড় ছেলে ইকরামুল হাসান শাকিল। 

গত সোমবার নেপালের স্থানীয় সময় ৬ টা ৩০ মিনিটে ইকরামুল হাসান শাকিল পৃথিবীর সর্বোচ্চ উঁচু পর্বতে পৌঁছে যান সপ্তম বাংলাদেশী হিসেবে। তার এই মাউন্ট এভারেস্ট জয়ে তার জন্মভূমি সহ সারা বাংলাদেশ ও পৃথিবীতে বইছে আনন্দের হাসি। 

তিনি বাকচালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শিক্ষা জীবন শুরু করেন এবং বাকচালা জনতা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস এস সি পাশ করে, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন। শাকিলের ছোট আরো দুই ভাই রয়েছে। সজীব আহমেদ ও শাকিব আহমেদ। ২০১৯ সালে শাকিলের বাবা মারা যাওয়ার পর মা শিরিনা বেগম সহ তিন সন্তানের জিবীকা নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়ছিল। তবুও থেমে যায়নি অদম্য তরুণ এই যুবক। মায়ের অনুপ্রেরণায় শাকিল চলতে থাকে সামনের দিকে। তার পর্বত বিজয়ীর কথা শুনে সে তার মা আবেগপ্লুত হয়ে পড়েন। এলাকাবাসী ও দূর দূরান্তের হাজার হাজার মানুষ তার গ্রামের বাড়িতে ভিড় করছে।

বাংলাদেশ মাউন্টেনিয়ারিং এন্ড ট্রাকিং ক্লাব বিএমটিসি এর তত্ত্বাবধানে শাকিল তার এই অভিযানের নাম দিয়েছে সি টু সামিট অর্থাৎ সমুদ্র থেকে শৃঙ্গ। সেই লক্ষ্যেই গত ২৫ শে ফেব্রুয়ারি দুপুরে কক্সবাজারের ইনানী সমুদ্র সৈকত থেকে এভারেস্ট চূড়ার উদ্দেশ্যে হাঁটা শুরু করেন। চট্টগ্রাম, ফেনী কুমিল্লা ও মুন্সীগঞ্জ হয়ে ১৩ দিন পর রাজধানী ঢাকায় পৌঁছান। মাত্র কয়েকদিন বিরতি দিয়ে আবার পায়ে হেঁটে তার নিজ উপজেলা হয়ে নিজ গ্রামে মা ও দুই ছোট ভাই এবং অন্যান্য পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব সাথে দেখা করে ভোরে আবার রওনা দেন। টাঙ্গাইলের যমুনা নদী সাঁতার কেটে পাড়ি দিয়ে সিরাজগঞ্জ হয়ে ২৮ মার্চ পঞ্চগড়ে পৌঁছান। বন্দরের ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া শেষ করে ২৯ মার্চ তিনি বাংলাদেশ থেকে প্রবেশ করেন ভারতে। এভাবেই এক হাজার ৩৭২ কিমি বেশি পথ পায়ে হেঁটে গত ২৯ এপ্রিল এভারেস্ট বেজ ক্যাম্পে পৌঁছান শাকিল। সেখান থেকে শুরু হয় পর্বত বিজয়ের মূল অভিযান। 

১৯৯০ সালে অস্ট্রেলিয়ার পর্বত আরোহী টিম ম্যাকার্টনি-স্নেপ ভারতের গঙ্গাসাগর থেকে ৯৬ দিনে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ পদচিহ্ন রাখেন। শাকিল তার চেয়ে সপ্তাহ খানেক কম সময়ে কম বয়সে পাড়ি দিয়েছে আরও একশো কিলোমিটার বেশি এই হিসাবে তিনি বিশ্ব রেকড গড়লেন। 

এদিকে সপ্তম বাংলাদেশী হিসেবে বিশ্বের উচ্চতম পর্বত শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন শাকিল। কিন্তু এর আগেও আরও ছয়জন বাংলাদেশীর পা পড়েছে মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায়। তারা হচ্ছেন- মুসা ইব্রাহীম, এম এ মুহিত, নিশাত মজুমদার, ওয়াজফিয়া নাসরিন, খালিদ হোসেন, বারর আলী।

শাকিল যে শুধু পর্বতআরোহী তা নয়, সে উদীয়মান, সহসী একজন লেখক, নাট্যকার। তার প্রকাশিত বই- হেয়ালী ফেরা, মাউন্ট কেয়াজো রি শিখরে বাংলাদেশ, পদচিহ্ন এঁকে যাই, পর্বত অভিযানে শ্বাসরুদ্ধকর পনের ঘন্টা, হিম লুং শিখরে, দেবী এবং নাটক নুরু মিয়ার কিচ্ছা। 
এই বিজয়ে মা শিরিনা বেগম জানান, আমার বড় ছেলে শাকিল মাউন্ট এভারেস্ট অভিযানে সফল হয়েছে। আমি শুধু ওর জন্য নামাজ পড়ে দোয়া করেছি ও জানি ভালোভাবে আমার কাছে দেশবাসীর কাছে ফিরে আসতে পারে। শাকিলের জন্য আমিও দোয়া করি এবং  দেশবাসীর কাছে শাকিলের জন্য দোয়া চাই। 

বাকচালা জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সোলাইমান খান জানান, শাকিল এই স্কুলের ছাত্র ছিল। তার এই পর্বত শৃঙ্গ বিজয়ে আমরা গর্বিত ও আনন্দিত। শাকিলের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করি।