Image description

সকালে এক কাপ গরম কফি পান কেবল শরীরের সতেজতা নয়, এই দৈনন্দিন অভ্যাসটি যে আপনার ভেতরের অগণিত বন্ধু ব্যাকটেরিয়াদেরও চাঙা করে তোলে, তা হয়তো অনেকেই জানে না। সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, আপনার প্রিয় কফি (এস্প্রেসো বা ল্যাটে) আপনার অন্ত্রের মাইক্রোবায়োমের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে, যা শুধু সার্বিক স্বাস্থ্য নয়, দীর্ঘ জীবন লাভেও সহায়ক হতে পারে।

ভাবছেন, আপনার কফি কীভাবে আপনার অন্ত্রের খেয়াল রাখে? ২০২৩ সালে নিউট্রিয়েন্টস জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা এই রহস্য উন্মোচন করেছে। ক্যাফেইন এবং কফি পানের সঙ্গে কোলনিক মাইক্রোবায়োমের সম্পর্ক অনুসন্ধান করে দেখা যায়, যারা নিয়মিত কফি পান করেন, তাদের অন্ত্রে মাইক্রোবায়োম বেশি থাকে। বিশেষ করে, Alistipes এবং Faecalibacterium-এর মতো সহায়ক ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, যা লিভার ফাইব্রোসিস এবং কার্ডিওভাসকুলার রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক প্রভাব ফেলে বলে মনে করা হয়। একই সময়ে, ক্ষতিকারক Erysipelatoclostridium নামক ব্যাকটেরিয়ার মাত্রা কমে আসে, যা অন্ত্রের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

এর আগেও একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে কফি পান বিফিডোব্যাকটেরিয়ামের বৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্কিত। এই ব্যাকটেরিয়া ফাইবার হজমে সাহায্য করে এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

কফির এই গুণাগুণের পেছনে রয়েছে এর প্রাকৃতিক উপাদান পলিফেনল। ফল, সবজি, ভেষজ, মশলা, চা, ডার্ক চকোলেট এবং ওয়াইনের মতো উদ্ভিজ্জ খাবারে প্রাকৃতিকভাবে এই যৌগটি পাওয়া যায়। কফিতে পাওয়া নির্দিষ্ট পলিফেনলটি ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড নামে পরিচিত।

২০২০ সালে এক্সপেরিমেন্টাল অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল সায়েন্সেস জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ কফি পান করেছেন, তাদের মধ্যে টাইপ ২ ডায়াবেটিস এবং নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার রোগের ঝুঁকি কমেছে, এমনকি তাদের ওজনও কমেছে। বিজ্ঞানীরা এর কারণ হিসেবে অন্ত্রের বিফিডোব্যাকটেরিয়ার (সেই "ভালো" ব্যাকটেরিয়াগুলির একটি) বৃদ্ধিকে দায়ী করেছেন।

ক্যাফেইন যে শুধু মেজাজ চাঙ্গা করে তাই নয়, এটি আপনার অন্ত্রের জন্যেও ভালো। ক্যাফেইন কোলনকে উদ্দীপিত করে এবং নিয়মিত মলত্যাগে সহায়তা করে। ১৯৯০ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, কফি পান করার প্রায় ৩০ মিনিট পর অনেক কফি পানকারীর মলত্যাগের প্রয়োজন হয়।

তবে কোন ধরনের কফি পান করছেন, তার ওপরও এর স্বাস্থ্যগুণ নির্ভর করে। বিশেষজ্ঞরা সাধারণত একমত যে, ক্যাপুচিনো, ল্যাটে বা ফ্ল্যাট হোয়াইটের চেয়ে কালো কফি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য বেশি ভালো।

তাহলে দিনে কত কাপ কফি পান করা উচিত? গ্রিসের ইউরোপীয় "দীর্ঘ জীবন" ব্লু জোনে বসবাসকারী শতবর্ষীদের একটি সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, তাদের প্রায় সকলেই প্রতিদিন দুই থেকে তিন কাপ কালো কফি পান করতেন।

যদিও কফি উপকারী, তবে সবাই এটিকে সমানভাবে বিপাক করতে পারে না। তাই ক্যাফেইনের সর্বোচ্চ প্রস্তাবিত পরিমাণ প্রতিদিন ৪০০ মিলিগ্রাম। ৬০০ মিলিগ্রামের বেশি ক্যাফেইন অনিদ্রা এবং উচ্চ রক্তচাপের সাথে যুক্ত হতে পারে। তাই কফি পানের ক্ষেত্রে পরিমিতিবোধ জরুরি। আপনার শরীর কতটা ক্যাফেইন গ্রহণ করতে পারছে, সেই অনুযায়ী আপনার কফি পানের পরিমাণ নির্ধারণ করা উচিত।