সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় ঈদের জন্য মেরামত হচ্ছে শতাধিক কোচ

আসছে ঈদুল আযহা (কুরবানীর ঈদ) উপলক্ষে অতিরিক্ত যাত্রীসেবা দিতে দেশের বৃহত্তম সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মব্যস্তা বেড়েছে। চলছে অতিরিক্ত কোচ মেরামতের কাজ। একদল শ্রমিক কাজ করছেন রেলওয়ের এক বিশালদেহী কোচের নিচে যেটিকে ক্রেনের মাধ্যমে উপরে তোলা হয়েছে (লিপ্টিং)। ওই কোচের আন্ডার ফ্রেমের (নিচের অংশ) বগিতে কী কী সমস্যা আছে তা পরীক্ষা করছিলেন শ্রমিকরা। সমস্যাগুলো চিহিৃত করে দ্রুত তা মেরামত করছিলেন শ্রমিকরা।
ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে সরেজমিনে গিয়ে ঠিক এমন কর্ম ব্যস্ততার দৃশ্য চোখে দেশের বৃহত্তম সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায়। কারখানার ক্যারেজ শপে চলছিলো কয়েকটি কোচের ভারি মেরামত। শপের (উপ-কারখানা) ইনচার্জ মমিনুল ইসলাম শ্রমিকদের সাথে কাজ করছিলেন।
তিনি বলেন, খুব ব্যস্ত আছি। আসছে কোরবানি ঈদে অনেকগুলো কোচের চাহিদা রয়েছে। এসব মেরামতের কাজ চলছে। নিয়মিত কাজের বাইরে শ্রমিকরা অতিরিক্ত কাজ (ওভারটাইম) করছে। সবাই ব্যস্ত।
সরজমিনে গিয়ে যায়, সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার ২৯টি শপ পুরোদমে ব্যস্ত কাজে। শপগুলোতে কোথাও কোচের চাকা স্থাপন, কোথাও রংয়ের প্রলেপন্ত, কোথাও যন্ত্রাংশ তৈরি, কোথাও আভ্যরিণ সাজ-সজ্জা (ইনটেরিয়র ডেকোশেন), আসন স্থাপন, ঢালাই, বৈদ্যুতিক ওয়ারিং কাজ হচ্ছে। এসব নিয়ে শ্রমিকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। সব ইনচার্জদের বারবার তাড়া দিচ্ছিলেন কারখানাটির বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক (ডিএস) শাহ সুফী নূর মোহাম্মদ ও কার্যব্যবস্থাপক (ডাব্লিউএম) মমতাজুল ইসলাম।
ক্যারেজ শপের সেডে দেখা গেলো বিশালদেহী একটি কোচকে উপরে তোলা হয়েছে। এর নিচে শ্রমিকদের কাজ করতে দেখা যায়।
তাঁরা ওয়েল্ডিং করে কোচের সমস্যা নিরুপণ করে মেরামত করছিলেন। পাশের একটি কোচের সুপার স্ট্রাকচার (সম্পূর্ণ বডি) নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছে। ওই কোচের ভেতরে অঙ্গসজ্জার কাজ। কারখানাটির পেইন্ট শপে কয়েকটি মেরামত হওয়া কোচের রংয়ের প্রলেপ দেওয়া হচ্ছিল। এদিকে বগি শপে দেখা যায়, কোচগুলোতে চাকা লাগানো হচ্ছে।
কারখানার সূত্র জানায়, তীব্র জনবল সঙ্কট রয়েছে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায়। এখানে তিন হাজার ২২০ জন বরাদ্দ শ্রমিক-কর্মচারীর মধ্যে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৮৫৪ জন। এছাড়াও ২৫০ জন অস্থায়ী শ্রমিক (টিএলআর) সহযোগী হিসাবে কাজ করছেন। এ অল্প সংখ্যক শ্রমিক দিয়ে কারখানায় চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। আসছে ঈদে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের জন্য ১০০ কোচ মেরামতের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে। এসব দিয়ে চলবে একাধিক ঈদ স্পেশাল ট্রেন। সাথে আন্ত:নগর ট্রেনে অতিরিক্ত কোচ জুড়ে দেওয়া হবে। ফলে যাত্রীসেবা বাড়বে। ঈদে ঘরমুখো মানুষ নির্বিঘ্নে আপনজনের কাছে যেতে পারবেন। আগামী ৪ জুন থেকে এ সেবা চালু করবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
একই সূত্র জানায়, ঈদের লক্ষ্যমাত্রার বাইরে গত ৫০ কার্যদিবসে নিয়মিত কাজের অংশ হিসাবে আরও ৪০টি কোচ মেরামত করা হয় সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায়। কাজেই রেল পরিসেবায় এবার কোচ সঙ্কটের কোনো আশঙ্কা নেই। অন্যান্য বারের চেয়ে এবার অধিক সংখ্যক যাত্রী রেল পরিবহনে সুযোগ পাবেন।
রেলওয়ে ট্রেড ইউনিয়ন রেল শ্রমিক ইউনিয়ন সৈয়দপুর কারখানা শাখার সাধারণ সম্পাদক শেখ রোবায়তুর রহমান জানান, লোকবল সঙ্কটের মাঝেও শ্রমিকরা বাড়তি চাপ নিচ্ছেন। আমরা অতিরিক্ত কাজকে হাসিমুখে মেনে নিয়েছি। কারণ আমরা চাই, আমাদের তৎপরতার কারণে ঈদে ঘরমুখো মানুষরা প্রিয়জনদের সাথে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করুক। তিনি দ্রুত লোকবল নিয়োগের দাবি জানান।
সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্ত্ববাবধায়ক (ডিএস) শাহ সুফী নূর মোহাম্মদ জানান, শত প্রতিকূলতার মাঝেও আমরা ঈদের জন্য সেবা নিশ্চিত করছি এটি বড় ব্যাপার। তিনি বলেন, আমরা ইতিমধ্যে ৯৭টি কোচ মেরামত শেষ করে রেলের ট্রাফিক বিভাগে হস্তান্তর করেছি। বাকি কোচগুলো খুব দ্রুত হস্তান্তর করা সম্ভব হবে। তিনি এসব কাজে সহযোগিতা করার জন্য রেলের শ্রমিক-কর্মচারীদের কৃতজ্ঞতা জানান।
Comments