শিক্ষক সংকটে ধুঁকছে শিবগঞ্জের প্রাথমিক শিক্ষা, ব্যাহত পাঠদান

বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের ব্যাপক সংকট দেখা দিয়েছে। ৪৭টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক এবং ৫৫টি বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক পাঠদান কার্যক্রম। একইসঙ্গে অফিসিয়াল কাজ সামলাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন শিক্ষকরা, এমন অভিযোগ অভিভাবকদের।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, শিবগঞ্জ উপজেলায় মোট ১৬২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৬২ জন প্রধান শিক্ষক ও ৮৬৭ জন সহকারী শিক্ষকের পদ রয়েছে। তবে বর্তমানে ৪৭টি প্রধান শিক্ষকের পদ এবং ৫৫টি সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য। প্রধান শিক্ষকবিহীন বিদ্যালয়গুলোতে একজন করে সিনিয়র সহকারী শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
একাধিক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, প্রায়শই তাদের নিয়মিত পাঠদান বন্ধ রেখে দাপ্তরিক কাজের জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসে যেতে হয়। ফলে ওই দিন শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়া সম্ভব হয় না। তারা আরও বলেন, শিক্ষক স্বল্পতা সত্ত্বেও তারা সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
অন্যদিকে, যে-সব বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে, সেখানকার শিক্ষকদের অতিরিক্ত ক্লাস নিতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে দ্রুত শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
শিক্ষকের অভাবের কারণে নিয়মিত ক্লাস না হওয়ার অভিযোগ করেছেন অভিভাবকরা। মানিক চন্দ্র, রফিকুল ইসলাম, রুহুল আমিন ও বজলুর রহমানের মতো অনেক অভিভাবক জানান, বিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকায় প্রায়শই ক্লাস হয় না। এমনকি পরীক্ষার সময়ও দুই-তিনজন শিক্ষক দিয়ে কার্যক্রম চালাতে দেখা যায়। বাধ্য হয়ে অনেকে তাদের সন্তানদের কেজি স্কুলে ভর্তি করতে হয়েছেন বলেও জানান তারা।
উপজেলার জগন্নাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এস এম রেজাউল তার সমস্যার কথা তুলে ধরে বলেন, প্রায় তিনশ শিক্ষার্থীর বিপরীতে তাকে একাই অফিসিয়াল কাজ ও পাঠদান দুটোই সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ কারণে অভিভাবকদের অসন্তোষের মুখেও পড়তে হয় তাকে।
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি বগুড়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও মোকামতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ফজলুর রহমান এই পরিস্থিতিকে ‘চেন অব কমান্ড’ ভেঙে পড়ার শামিল বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, সহকারী শিক্ষকদের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়ায় অনেক সময় অধস্তন শিক্ষকরা তাদের নির্দেশ মানতে চান না, যা প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি করে।
তবে শিবগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সাইফুন নাহার জানান, শূন্য পদে শিক্ষকদের তালিকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে পাঠানো হয়েছে। নতুন শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেই এই সংকট নিরসন হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
Comments