নানা রঙের ফুলে সেজেছে শ্রীমঙ্গল, মুগ্ধ করছে দর্শনার্থীদের

চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গল এখন সেজেছে এক ভিন্ন রূপে। শহরের প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে অলিগলি, এমনকি সুদূর চা বাগান পর্যন্ত প্রকৃতি যেন তার সব রঙের পসরা মেলে ধরেছে। বিশেষ করে শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সড়ক পরিণত হয়েছে এক নয়নাভিরাম ফুলের স্বর্গরাজ্যে। মাইলের পর মাইল সড়কের দুই পাশে শোভা পাচ্ছে সোনালু, ক্যাসিয়া, জারুল, রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া, কুরচি আর হুরহুরের মতো অসংখ্য রঙিন ফুল।
কয়েকদিনের বৃষ্টিতে এই সৌন্দর্য যেন আরও প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। সড়কের দুপাশের বৃক্ষরাজি ফুলভারে নুুয়ে পড়েছে, যা দূর থেকে দেখলে মনে হয় কোনো শিল্পীর আঁকা ছবি। যানবাহনের জানালা দিয়ে তাকালে যে কারো মন মুহূর্তে ভরে ওঠে শান্তিতে, আর বাতাসে ভেসে বেড়ানো ফুলের মিষ্টি সুবাস যেন পথিকের ক্লান্তি দূর করে দেয় নিমিষেই। এই পথে চলাচলকারী যাত্রীরা এখন গন্তব্যে পৌঁছানোর তাড়া ভুলে ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করছেন।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভানুগাছ রোডে শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সড়কের দুই পাশে হলুদ সোনালু আর ক্যাসিয়ার উজ্জ্বল উপস্থিতি, বেগুনি জারুলের শান্ত শোভা, গোলাপি রাধাচূড়ার স্নিগ্ধতা এবং কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম আভা প্রকৃতিকে এক অভূতপূর্ব রঙে রাঙিয়ে তুলেছে। গাছে গাছে থোকা থোকা কৃষ্ণচূড়ার লাল যেন আগুনের শিখা, আর সোনালুর দীর্ঘ মঞ্জরি বাতাসে দোল খেয়ে তৈরি করছে এক মনোরম দৃশ্য। মনে হয়, প্রকৃতি নিজেই তার সন্তানদের লাল আর হলুদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাচ্ছে। চলার পথে ঝরে পড়া ফুলের পাপড়ি যেন পথচারীদের জন্য এক রঙিন গালিচা বিছিয়ে দিয়েছে। এই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসছেন ফুল ও প্রকৃতিপ্রেমীরা।
শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের ছাত্রী সাদিয়া তার মুগ্ধতা প্রকাশ করে বলেন, “শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সড়কের বধ্যভূমি ৭১-এর সামনে থেকে টি মিউজিয়াম পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে কৃষ্ণচূড়া, জারুল, সোনালু, ক্যাসিয়া, রাধাচূড়াসহ বিভিন্ন রঙের ফুল আমাদের প্রতিদিন বিমোহিত করে। প্রতি বছর গ্রীষ্মে যখন এই ফুলগুলো ফোটে, তখন এই সড়কটি যেন এক ভিন্ন জগৎ হয়ে ওঠে। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ এখানে এসে ছবি তোলে, ভিডিও করে এই অসাধারণ সৌন্দর্যকে ধরে রাখে।”
ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গলে বেড়াতে আসা পর্যটক ইভা জানান, “পরিবারের সাথে তিন দিন ধরে শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন জায়গা ঘুরেছি। তবে সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ হয়েছি শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়কে এসে। সড়কের দুই পাশে সারি সারি চা বাগান এবং তার সাথে গাছে গাছে ফোটা জারুল, ক্যাসিয়া, সোনালু, কৃষ্ণচূড়ার মতো এত সুন্দর ফুল আগে কখনো দেখিনি। এটা সত্যিই অসাধারণ।”
কুঞ্জবন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একরামুল কবীর এই সড়কের সৌন্দর্য নিয়ে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেন, “প্রতি বছর এই সময়ে এই সড়ক নতুন রূপে সেজে ওঠে। কৃষ্ণচূড়া ফুলের লাল রঙে পুরো এলাকা যেন রঙিন হয়ে যায়। মনে হয় যেন প্রকৃতিতে আগুন লেগেছে। পড়ন্ত বিকেলে পূর্ব আকাশের রক্তিম আভার সাথে কৃষ্ণচূড়ার রঙ মিশে এক অপার্থিব দৃশ্যের সৃষ্টি করে। এই ফুলগুলো দেখলে মন শান্তিতে ভরে যায়। গাছের ছায়া ও বাতাসে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। তীব্র রোদের মধ্যেও এখানে এসে একটু প্রাকৃতিক প্রশান্তি পাওয়া যায়।”
Comments