
জাপানে জনশক্তি রপ্তানি বাড়ানোর জন্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় একগুচ্ছ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এই সিদ্ধান্তের মূল লক্ষ্য হলো জাপানে বাংলাদেশের দক্ষ কর্মীদের জন্য নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা এবং দেশের রিজার্ভ বৃদ্ধি করা। সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে মন্ত্রণালয় এই তথ্য জানিয়েছে।
গত ৩ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয় সংক্রান্ত বিশেষ দূত (উপদেষ্টা পদমর্যাদা) লুৎফে সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় এই সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হয়। এর মধ্যে অন্যতম হলো, প্রধান উপদেষ্টার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে ‘জাপান সেল’-এর কার্যক্রম নিয়ে একটি পোস্ট প্রকাশ করা হবে। এতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এবং জাপানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য থাকবে।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, "আমাদের জনশক্তি রপ্তানি লক্ষ্য হবে জনগণের নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ ও দারিদ্র্য বিমোচন। জাপান ডেস্কের মাধ্যমে আমরা এই লক্ষ্য অর্জন করতে পারব বলে বিশ্বাস করি।"
জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন, "জাপানি ভাষা পরীক্ষার সব ধাপের পরীক্ষা সম্পন্ন নিরীক্ষণ এবং সংখ্যার পরিবর্তে মান নিশ্চিত করতে জাপান সরকার ফোকাসড হতে চাইছে।"
জাপানে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির লক্ষ্যে ন্যাশনাল বিজনেস সাপোর্ট কো-অপারেটিভ ফেডারেশন (এনবিসিসি), জাপান বাংলা ব্রিজ রিক্রুটিং এজেন্সি লিমিটেড (জেবিবিআরএ), এবং কাইকম ড্রিম স্ট্রিট বিডি কোম্পানি লিমিটেডের (কেডিএস) মধ্যে একটি চুক্তি সই হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রশিক্ষণ প্রদান ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার পূর্ণাঙ্গ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
'জাপান ডেস্ক' নামের এই কার্যক্রমের মূল উদ্দেশ্যগুলো হলো:
জাপানের শ্রমবাজারের চাহিদা অনুসন্ধান ও কর্মসংস্থানের সুযোগ চিহ্নিত করা।
কর্মীদের ভাষা প্রশিক্ষণ, ডিজিটাল টেস্ট ও তথ্যসংগ্রহের ব্যবস্থা করা।
জাপান ও বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ ও সমন্বয় সাধন করা।
বর্তমানে স্পেসিফায়েড স্কিল্ড ওয়ার্কার (এসএসডাব্লিউ) ক্যাটাগরির ১৬টি সেক্টরের মধ্যে ৬টি সেক্টরে (কৃষি, নির্মাণ শিল্প, নার্সিং, বিল্ডিং পরিষ্কার ব্যবস্থাপনা, অটোমোবাইল ও পরিবহন) কর্মী নিয়োগের জন্য পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে।
নতুন ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজ: জাপান সেল নিজস্ব ওয়েবসাইট ([email protected]) এবং ফেসবুক পেইজ চালু করেছে, যেখানে কর্মসংস্থান সম্পর্কিত তথ্য শেয়ার করা হচ্ছে।
পরীক্ষাকেন্দ্র বৃদ্ধি: জাপানি ভাষা দক্ষতা পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায়, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ ৬টি প্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত পরীক্ষাকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
অনলাইন ভাষা প্রশিক্ষণ: ১৪ আগস্ট থেকে অনলাইন ভাষা প্রশিক্ষণের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চালু হয়েছে।
ডাটাবেজ তৈরি: ভবিষ্যতে নিয়োগ প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য জাপানি ভাষা পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের একটি ডাটাবেজ তৈরির কাজ চলছে।
শিক্ষক ও বেতন: জাপানি ভাষা প্রশিক্ষকদের বেতন প্রতি ঘণ্টার পরিবর্তে মাসিক ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়েছে।
ভিসা সমস্যা নিরসন: জাপানি ভিসার জন্য আবেদনকারীদের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ভিসা ফ্যাসিলিটেশন সার্ভিসেস (ভিএফএস)-এর সমস্যা নিরসন করা হয়েছে।
এছাড়াও, জাপানের সহায়তায় ১ লাখ বাংলাদেশি অভিবাসীকে জাপানি ভাষাসহ নির্দিষ্ট দক্ষ কর্মীর (এসএসডব্লিউ) অধীনে প্রশিক্ষণ প্রদানের একটি প্রকল্প প্রণয়ন করে ইকোনমিক রিলেশনস ডিভিশন (ইআরডি)-এ পাঠানো হয়েছে। ২০২৭ সাল থেকে টেকনিক্যাল ইন্টার্ন ট্রেনিং প্রোগ্রামের (টিআইটিপি) পরিবর্তে দক্ষতা উন্নয়নের জন্য কর্মসংস্থান (ইএসডি) শুরু হতে যাচ্ছে, যা নতুন কর্মীদের জন্য আরও সুযোগ তৈরি করবে।
Comments