
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন যখন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছিল, সেই সময় গত বছরের ১৬ জুলাই দুপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্ক মোড়ে গুলিবিদ্ধ হন আবু সাঈদ। ২৫ বছর বয়সী আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন।
এদিকে, এ বছর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের নতুন পাঠ্যবইয়ে নানাভাবে উঠে এসেছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের কথা। গল্প-কবিতা, সংকলন এবং ছবি ও গ্রাফিতির মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের বিষয়বস্তু।
নবম-দশম শ্রেণির “ইংলিশ ফর টুডে” বইয়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে লেখা “গ্রাফিতি” নামে একটি অধ্যায় যুক্ত হয়েছে। এর শুরুতে রাজধানীর মেট্রোরেলের পিলারে আঁকা “হামাক বেটাক মারলু কেনে?” শীর্ষক একটি প্রতিবাদী লেখা যুক্ত রয়েছে। এর পরের পৃষ্ঠায় এই গণ-অভ্যুত্থানে শহিদ আবু সাঈদের কথা রয়েছে। বইয়ে পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদের নিহত হওয়ার তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ১৭ জুলাই। প্রকৃতপক্ষে এটি হবে ১৬ জুলাই।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে এই ভুলের কথা স্বীকার করেছেন। তারা দ্রুতই এ বিষয়ে সংশোধনী দেবেন বলে জানিয়েছেন।
এদিকে আবু সাঈদের হত্যাকাণ্ডের তারিখ পরিবর্তনসহ নতুন পাঠ্যপুস্তকে ইতিহাস বিকৃতির প্রতিবাদে রংপুরে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে শিক্ষার্থীরা এ প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেন।
সমাবেশ থেকে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে পাঠ্যপুস্তকে আবু সাঈদের মৃত্যুর তারিখসহ অন্যান্য বিষয় সংশোধন করার দাবি তোলা হয়। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয় সমাবেশ থেকে।
সমাবেশে বক্তব্য দেন রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী শামসুর রহমান সুমন, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী রহমত আলী প্রমুখ।
তারা বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানের প্রতীক শহিদ আবু সাঈদকে নিয়ে এনসিটিবির যে কুচক্রীরা ষড়যন্ত্রে জড়িত তাদের আইনের আওতায় না আনলে ছাত্র-জনতা তা মেনে নেবে না। তারা ইচ্ছাকৃতভাবে আবু সাঈদকে বিতর্কিত করার জন্য এ কাজ করেছে।”
শিক্ষার্থীরা আরও অভিযোগ করেন, “আবু সাঈদ গত বছরের ১৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে পুলিশের গুলির বিপরীতে বুক উঁচিয়ে দাঁড়ান। ভয় না পেয়ে তিনি সেখানে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকেন। এরপরেই পুলিশ তাকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে। অথচ এবারের নতুন পাঠ্যপুস্তকে তার শহিদ হওয়ার তারিখ ১৭ জুলাই উল্লেখ করা হয়েছে। যা বর্তমান প্রজন্মের কাছে ভুল বার্তা পৌঁছাবে।”
এছাড়াও আবু সাঈদ সম্পর্কে বিকৃত তথ্য দেওয়া হয়েছে বলে সমাবেশে অভিযোগ তোলা হয়।
মানবকণ্ঠ/আরআই
Comments