
কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে সরকারি ত্রাণের সিমেন্ট, বালু ও টিন সেন্টমার্টিনে নেওয়ার কথা বলে অভিনব কায়দায় মিয়ানমারে পাচার করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে একটি চক্রের বিরুদ্ধে। বুধবার (৩০ এপ্রিল) উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখার বরাদ্দকৃত এই বিপুল পরিমাণ নির্মাণসামগ্রী বোঝাই ট্রলারটি তিনজন মাঝিমাল্লাসহ উধাও হয়ে যায়। বৃহস্পতিবার(১ মে) সন্ধ্যা পর্যন্ত ট্রলারটি সেন্টমার্টিনে না পৌঁছানোয় বিষয়টি জানাজানি হয়।
স্থানীয় ট্রলার মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, টেকনাফ বিচ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য আশিকুর রহমান, সেন্টমার্টিনের সাবেক ইউপি সদস্য আক্তার কামাল, নুরুল ইসলাম ও আবদুল মুনাফের যোগসাজশে একটি চোরাকারবারি চক্র এই সরকারি মাল আত্মসাৎ করে মিয়ানমারে পাচার করেছে।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সেন্টমার্টিনের পর্যটন তথ্য ও অভিযোগ কেন্দ্র সংস্কারের জন্য টিআর (টেস্ট রিলিফ) প্রকল্পের আওতায় গত ২৮ এপ্রিল আশিকুর রহমানকে ৯ বান্ডিল টিন, ৭০ ফুট কাঠ, ৩০ কার্টন টাইলস, ৩০০ ফুট বালু ও ২০ ব্যাগ সিমেন্ট বরাদ্দ দেয় উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখা।
তবে অভিযোগ উঠেছে, আশিকুর বরাদ্দের অনুমতিপত্র জালিয়াতি করে ২০ ব্যাগের স্থলে ৪০০ ব্যাগ সিমেন্ট উল্লেখ করেন এবং সেই বিপুল পরিমাণ সিমেন্টসহ অন্যান্য সামগ্রী সেন্টমার্টিনের পরিবর্তে মিয়ানমারে পাচার করে দেন। এই ঘটনাকে উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে প্রতারণা ও গুরুতর অপরাধ হিসেবে দেখছে স্থানীয় প্রশাসন।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দীন এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘সেন্টমার্টিনের পর্যটন তথ্য ও অভিযোগ কেন্দ্র সংস্কারের জন্য বিচ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য আশিকুর রহমানকে ২০ বস্তা সিমেন্টসহ কিছু মালামাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আমরা খবর পেয়েছি, তিনি মালামালের অনুমতিপত্র জালিয়াতি করে ৪০০ বস্তা সিমেন্ট মিয়ানমারে পাচার করেছেন। এই ঘটনা তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তবে অভিযুক্ত আশিকুর রহমান নিজের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘পর্যটন তথ্য ও অভিযোগ কেন্দ্র সংস্কারের জন্য টিআর প্রকল্পের বরাদ্দের অনুমতিপত্র আমার নামে দেওয়া হলেও সেন্টমার্টিনের ইউপি সদস্য মাহফুজা আক্তার তা রিসিভ করেন। পরে শুনেছি সরকারি বরাদ্দের মালামাল মিয়ানমারে পাচার করে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি আমার জানা নেই। এ ঘটনায় আমি জড়িত নই। একটি চক্র আমাকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে।’
ইউপি সদস্য মাহফুজা আক্তারও একই সুরে বলেন, ‘টিআর প্রকল্পের বরাদ্দের অনুমতিপত্র হাতে পেলেও আমরা মালামাল বুঝে নিইনি। একটি চক্র অনুমতিপত্র জালিয়াতি করে বরাদ্দকৃত মালামাল তুলে মিয়ানমারে পাচার করেছে।’
টেকনাফ-সেন্টমার্টিন সার্ভিস ট্রলার মালিক সমিতির সদস্যরা জানান, বুধবার বিকেলে উপজেলা প্রশাসনের অনুমতিপত্র দেখিয়ে মো. সারোয়ার হোসেনসহ তিন জন মাঝিমাল্লা ৪০০ বস্তা সিমেন্ট, ৯ বান্ডিল টিনসহ অন্যান্য বরাদ্দকৃত মালামাল ট্রলারে তোলেন। এই মালামাল বুঝে নেওয়ার দায়িত্বে ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা কেফায়েত উল্লাহ, যিনি সেন্টমার্টিনের চোরাকারবারি আক্তার কামালের সহযোগী হিসেবে পরিচিত।
কেফায়েত উল্লাহ দাবি করেন, ‘সেন্টমার্টিনের সাবেক ইউপি সদস্য আক্তার কামাল উপজেলা প্রশাসনের বরাদ্দের একটি অনুমতিপত্র আমাকে দিয়েছেন। সেইটির বরাদ্দের মালামাল বুধবার বিকালে ট্রলারে তোলা হয়। বৃহস্পতিবার বিকালে জানতে পেরেছি, মালামালগুলো মিয়ানমারে পাচার করা হয়েছে। এতে আমি জড়িত নই।’
এই বিষয়ে জানতে ইউপি সদস্য আক্তার কামালের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
কায়ুকখালী ঘাটের মাঝি আবদুল আলীম ওরফে আলম জানান, ‘বুধবার বিকালে আক্তার কামালের নামে একটি অনুমতি দেখিয়ে ৪০০ ব্যাগ সিমেন্ট, বালু ও টিন ট্রলারে তোলা হয়। ট্রলারটি পরে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে রওনা দেয়। আজ জেনেছি, ভুয়া কাগজ দেখিয়ে মিয়ানমারে সিমেন্ট পাচার করা হয়েছে। একটি সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমারে মালামাল পাচার করে আসছে। তাদের আইনের আওতায় আনলে পাচার বন্ধ হবে।’
টেকনাফ-সেন্টমার্টিন সার্ভিস ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রশিদ বলেন, ‘টেকনাফ থেকে সিমেন্ট, বালু ও টিনবোঝাই একটি ট্রলার সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে যাত্রা করলেও সেটি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দ্বীপে পৌঁছেনি। ট্রলারটি মিয়ানমারে ঢুকে গেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।’
Comments