Image description

পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার দুই দিনের সফরে ঢাকায় এসে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেছেন। শনিবার বিকেলে তিনি বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের সঙ্গে পৃথকভাবে আলোচনায় মিলিত হন। ১৩ বছর পর কোনো পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফর হিসেবে এটি দুই দেশের সম্পর্ক জোরদারে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

বিএনপির সঙ্গে বৈঠক

পাকিস্তান হাইকমিশনে বিএনপির ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ইসহাক দারের সঙ্গে বৈঠক করে। দলটির নেতৃত্ব দেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক্স হ্যান্ডেলে বলা হয়, “পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সুবিধার ভিত্তিতে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারে পাকিস্তানের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। আলোচনায় সার্ক প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের মৌলিক ভূমিকার প্রশংসা করা হয় এবং আঞ্চলিক সহযোগিতার বিষয়টি তুলে ধরা হয়।”

বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী এবং সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ উপস্থিত ছিলেন।

জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আলোচনা

জামায়াতের নায়েবে আমীর আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহেরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে। জামায়াত নেতা আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, “আলোচনায় দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়, আঞ্চলিক বাণিজ্য এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের বিভিন্ন দিক উঠে এসেছে। সার্ক চালু করাসহ ভ্রাতৃপ্রতিম মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন এবং অমীমাংসিত ইস্যুগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তির ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।”

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক্স হ্যান্ডেলে বলা হয়, “ইসহাক দার জামায়াত নেতা-কর্মীদের কষ্ট ও অসুবিধার মুখে সাহস এবং অবিচলতার প্রশংসা করেছেন।”

এনসিপির সঙ্গে বৈঠক

এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেনের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ইসহাক দারের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেয়। এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, “বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের শিক্ষা, অর্থনীতি এবং সংস্কৃতিতে সম্পর্ক উন্নয়নের সুযোগ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সম্পর্ক উন্নয়নে কোনো ধরনের আধিপত্যবাদী মানসিকতা থাকবে না বলে আমরা জোর দিয়েছি।”

এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, “দক্ষিণ এশিয়ায় পানিকে কেন্দ্র করে সম্ভাব্য সংকট ও যুদ্ধের ঝুঁকি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের নদীমাতৃক অভিজ্ঞতা এবং পাকিস্তানের অতীত অভিজ্ঞতা বিনিময় করা হয়েছে।”

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, “ইসহাক দার এনসিপির সংস্কার ও সামাজিক ন্যায়বিচারের দৃষ্টিভঙ্গির প্রশংসা করেছেন এবং যুবসমাজের মধ্যে বৃহত্তর যোগাযোগের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন।”

সফরের দ্বিতীয় দিনের কর্মসূচি

শনিবার দুপুরে বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকায় পৌঁছে ইসহাক দারকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব আসাদ আলম সিয়াম। রোববার তিনি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে একান্ত ও প্রতিনিধি পর্যায়ে বৈঠক করবেন। বৈঠকের পর পাঁচ থেকে ছয়টি চুক্তি ও এমওইউ সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, “এই সফর পাকিস্তান-বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।” শিক্ষা, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, ওষুধ খাত, প্রতিরক্ষা এবং আঞ্চলিক সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করেছে।