
দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ৭টি রাজনৈতিক দল এবং হেফাজতে ইসলামের নেতারা বৈঠক করেছেন। মঙ্গলবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে বিভিন্ন দলের নেতারা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের মতামত তুলে ধরেন।
দলগুলোর মূল বক্তব্য-
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ: দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে কোনো সরকারই জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। তিনি বিদ্যমান সমস্যা মোকাবিলায় সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (PR) পদ্ধতিতে নির্বাচন অথবা গণভোটের দাবি জানান। তিনি আরও বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়েছে এবং আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলীয় জোটের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি জানান।
এলডিপি: দলের মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য তাদের কাছে পরামর্শ চেয়েছেন। তিনি প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বদলি প্রক্রিয়ায় দক্ষতার ওপর জোর দেন এবং বলেন যে, লটারি করে বদলি করা 'শিশুসুলভ' পদক্ষেপ। তিনি আরও বলেন, দেশ থেকে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার না হলে মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হবে না। রেদোয়ান আহমেদ আসনভিত্তিক নির্বাচনের পক্ষে মত দেন এবং বলেন যে, এখন পিআর পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা ঠিক নয়।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ: যুগ্ম মহাসচিব আজিজুর রহমান ইসলামাবাদী সংবিধানে 'আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস' পুনর্বহাল করার দাবি জানান। তিনি জুলাই সনদের সময় শাপলা চত্বরে সংঘটিত গণহত্যার বিচার এবং আওয়ামী লীগের চিহ্নিত অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও প্রশাসনের ভেতর থেকে তাদের বহিষ্কারের দাবি করেন।
গণসংহতি আন্দোলন: প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি জানান, প্রধান উপদেষ্টা একটি উৎসবমুখর নির্বাচন আয়োজন করতে বদ্ধপরিকর। তিনি বলেন, তারা দু'টি বিষয়ে জোর দিয়েছেন: প্রথমত, সরকারের রাষ্ট্র পুনর্গঠনে ব্যর্থতার কারণে যে সংকট তৈরি হচ্ছে, তা নিরসন করা; দ্বিতীয়ত, ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে একটি কমিটি গঠন করে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া।
এবি পার্টি: চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু সরকারের কার্যক্রমে শৃঙ্খলার অভাব থাকার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়হীনতা স্পষ্ট হয়েছে, যা নির্বাচন নিয়ে সংশয় তৈরি করছে। তিনি জাতীয় ও জেলা পর্যায়ে একটি সমন্বিত কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেন।
গণঅধিকার পরিষদ: সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান জানান, সরকার নুরের ওপর হামলার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছে এবং বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের আশ্বাস দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, নুরের উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নিয়ে যাওয়া হবে। রাশেদ খান প্রশ্ন তোলেন, কেন দুটি সরকার কাজ করছে: একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, এবং অন্যটি 'অদৃশ্য সরকার', যা সহযোগিতা করছে না।
নুরের স্ত্রী: মারিয়া আক্তার জানান, প্রধান উপদেষ্টা নুরের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিয়েছেন এবং এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, নুরের উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে।
এই ধারাবাহিক সংলাপকে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
Comments