
ক্যানসার একটি ভয়াবহ রোগ যার চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে, শুধুমাত্র জীবনযাপনের কিছু অভ্যাস পরিবর্তন করে এই রোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। এর মধ্যে সবচেয়ে কার্যকরী একটি উপায় হলো নিয়মিত শরীরচর্চা। চিকিৎসকরা বলছেন, ব্যায়াম ক্যানসারের কোষ বৃদ্ধিকে বাধা দেয় এবং দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে। সম্প্রতি বিভিন্ন গবেষণায় ক্যানসার প্রতিরোধের জন্য ব্যায়ামের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার একদল বিজ্ঞানী একটি গবেষণায় দেখিয়েছেন, মাত্র এক দফায় ব্যায়াম ক্যানসার কোষের বৃদ্ধির গতি ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দিতে পারে। এটি প্রমাণ করে ব্যায়াম শুধু দীর্ঘমেয়াদী নয় বরং স্বল্প সময়ের জন্যও ক্যানসার প্রতিরোধে তাৎক্ষণিক প্রভাব ফেলে।
একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জানান, নিয়মিত ব্যায়াম শুধু স্তন ক্যানসার বা ডিম্বাশয়ের ক্যানসার নয় বরং কোলন ক্যানসারের ঝুঁকিও কমায়। তিনি আরও জানান, সম্প্রতি শিকাগোতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ক্যানসার কনফারেন্সে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, কোলন ক্যানসারের স্টেজ ২ এবং স্টেজ ৩-এর রোগীদের ওপর পরীক্ষা করে দেখা গেছে যারা কেমোথেরাপির পর নিয়মিত ব্যায়াম করেছেন, তাদের ক্যানসার ফিরে আসার ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় অনেক কম। এই গবেষণার পর কোলন ক্যানসার রোগীদের জন্য নিয়মিত শরীরচর্চা অপরিহার্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা দুই ধরনের ব্যায়ামকে ক্যানসার প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর বলে মনে করেন:
রেজিস্ট্যান্স ট্রেনিং (Resistance Training): এই ধরনের ব্যায়ামের মূল লক্ষ্য হলো পেশি শক্তিশালী করা। ডাম্বেল, কেটলবেল বা ভারোত্তোলনের মতো সরঞ্জাম ব্যবহার করে এই ব্যায়াম করা হয়। এর পাশাপাশি স্কোয়াট, পুশ-আপ, প্ল্যাঙ্ক, এবং বাইসেপস কার্ল-এর মতো শরীরচর্চাও এর অন্তর্ভুক্ত।
হাই-ইন্টেনসিটি ইন্টারভ্যাল ট্রেনিং (HIIT): এটি একটি দ্রুতগতির ব্যায়াম পদ্ধতি। অল্প সময়ের জন্য খুব বেশি পরিশ্রম করার পর অল্প বিশ্রাম নেওয়া হয়। যেমন— ৩০ সেকেন্ড জাম্পিং জ্যাক করে ১৫ সেকেন্ড বিশ্রাম, তারপর আবার ৩০ সেকেন্ড বার্পি। এভাবে ৩০ মিনিট ব্যায়াম করলে সুফল পাওয়া যায়।
বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন ব্যায়াম করা উচিত। প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ মিনিটের নিয়মিত শরীরচর্চাই ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
Comments