
মাগুরায় আলোচিত আট বছর বয়সী শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলার রায়ে প্রধান আসামি হিটু শেখকে (বোনের শ্বশুর) মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। তবে মামলার অপর তিন আসামি খালাস পাওয়ায় রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন নিহত শিশুর আয়েশা আক্তার। শনিবার (১৭ মে) সকালে রায় ঘোষণার পর আদালত চত্বরে তিনি এই প্রতিক্রিয়া জানান।
আয়েশা আক্তার জানান, "হিটু শেখের ফাঁসিতে আমি খুশি। তবে অন্য তিনজনের বেকসুর খালাসে আমি অসন্তুষ্ট।"
তিনি অভিযোগ করেন, খালাসপ্রাপ্ত তিনজন এই ঘটনার তথ্য গোপন ও ভয়ভীতি প্রদর্শনে জড়িত ছিল। এছাড়াও তার জামাই সজীব শেখও এই ঘটনায় জড়িত বলে তিনি দাবি করেন। রায়ের কপি হাতে পেলে খালাসপ্রাপ্ত তিনজনের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলেও জানান তিনি।
এর আগে মাগুরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসান এই রায় ঘোষণা করেন। রায়ে বিচারক প্রধান আসামি হিটু শেখকে মৃত্যুদণ্ড এবং এক লাখ টাকা জরিমানা করেন। একইসঙ্গে হিটু শেখের স্ত্রী জাহেদা বেগম, সন্তান সজীব শেখ ও রাতুল শেখকে মামলা থেকে খালাস দেন।
উল্লেখ্য গত ১ মার্চ শ্রীপুর উপজেলার আট বছর বয়সী শিশুটি মাগুরা শহরতলীর নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বড় বোনের বাড়িতে বেড়াতে যায়। সেখানে ৬ মার্চ সে ধর্ষণের শিকার হয়। প্রথমে তাকে মাগুরা ২৫০ শয্যার হাসপাতাল, পরে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। সবশেষ ১৩ মার্চ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটি মারা যায়।
এই ঘটনায় শিশুটির মা মাগুরা সদর থানায় বড় মেয়ের শ্বশুর হিটু শেখ, জামাই সজীব শেখ, তার ভাই রাতুল শেখ এবং তাদের মা রোকেয়া বেগমের নামে মামলা করেন। পুলিশ চার আসামিকে গ্রেপ্তার করে।
গত ১৩ এপ্রিল এই মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন। অভিযোগপত্রে আসামি রোকেয়া বেগমের বিরুদ্ধে তথ্য গোপন এবং সজীব শেখ ও তার ভাই রাতুল শেখের বিরুদ্ধে ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ আনা হয়েছিল।
রায় ঘোষণা শেষে আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী বলেন, দেশব্যাপী আলোচিত এই মামলার রায়ে আসামিদের ফাঁসির দাবিতে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল। প্রধান আসামি হিটু শেখের ফাঁসির রায়ের মাধ্যমে প্রতিবাদকারীরা সান্ত্বনা খুঁজে পাবে।
তিনি আরও বলেন, হিটু শেখ ছাড়া তিন আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে। এই তিন আসামির শাস্তির জন্য উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে। মাত্র ১৩ কার্যদিবসে মামলার রায় ঘোষণা একটি যুগান্তকারী ঘটনা উল্লেখ করে স্বল্প সময়ে এই বিচারকার্যে যারা বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন, তাদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী।
Comments