
ডিজিটাল যুগে স্মার্টফোন, ইন্টারনেট আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেখানে খবর এখন হাতের মুঠোয় সেখানে কেউ কেউ এখনও দিনের শুরু করেন পুরোনো দিনের মতো, কাগজের পাতায় চোখ বুলিয়ে। গাজীপুর মহানগরের পূবাইল ভাদুন এলাকার মৃত কছিম উদ্দিন ভুঁইয়ার ছেলে বিএম আল মোস্তফা পিন্টু তাঁদের মধ্যে একজন।
৪৮ বছর বয়সী এই ক্রীড়া শিক্ষক প্রতিদিন নিয়মিতভাবে কিনে থাকেন ১০ থেকে ১২টি জাতীয় দৈনিক। ভাদুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্রীড়া শিক্ষক হওয়ার পাশাপাশি তিনি মহানগর সানরাইজার্স ফুটবল একাডেমির পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। খেলাধুলা ও শিক্ষাঙ্গনে পরিচিত মুখ হলেও, তার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছে খবরের কাগজ।
পত্রিকার সঙ্গে পিন্টুর সম্পর্ক শুরু হয়েছিল ছোটবেলায়। ১৯৮২ সালে টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে খবরের কাগজ কেনাই ছিল তার নেশা। সেই প্রেম আজও অটুট। পুরোনো দিনের স্মৃতি মনে করতে গিয়ে পিন্টু জানান, ১৯৮৪ সালের ভোরে পত্রিকা কিনতে বেরিয়েছিলাম। পূবাইল রেলস্টেশনে পত্রিকা না পেয়ে নরসিংদী পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছিলাম। খেয়ে না খেয়ে ১০ টাকা খরচ করে বিকেলে ফিরেছিলাম, কেবল একটি পত্রিকা হাতে নিয়ে।
পিন্টুর মতে, একটি পত্রিকায় সব খবর পাওয়া যায় না। প্রতিটি পত্রিকার ভাষা, উপস্থাপন ও দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন। তাই খবরের পূর্ণতা পেতে একাধিক পত্রিকা পড়া তার কাছে অপরিহার্য। শুধু পড়াই নয়, গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যাগুলো তিনি আজও যত্ন করে সংরক্ষণ করেন।
যেখানে অধিকাংশ মানুষ এখন মোবাইলের স্ক্রিনে চোখ রাখেন, সেখানে পিন্টুর মতো পাঠকেরা এখনও ছুটে যান দূরদূরান্ত থেকে ছাপার অক্ষরে লেখা সংবাদ সংগ্রহ করতে। তার এই অভ্যাস যেন একটি প্রাচীন রূপকথা যেখানে কাগজের গন্ধ, ছাপার অক্ষর এবং খবরের বিশ্লেষণ তার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
পিন্টুর পরিচিতি শুধু পত্রিকা প্রেমেই সীমাবদ্ধ নয়। ক্রীড়াঙ্গনে দীর্ঘদিন ধরে তিনি অসংখ্য শিক্ষার্থীকে খেলাধুলার প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছেন। তার কাছে কাগজের পত্রিকা হাতের মুঠোয় নেওয়া মানে শুধু খবর পড়া নয়, বরং জীবনের এক রীতি ও আনন্দ। প্রতিদিন খবরের কাগজ হাতে নিয়ে দিন শুরু করা তার জন্য এক ধরনের আধ্যাত্মিক অভ্যাস, যা তাকে নতুন উদ্যম ও তাজা অনুভূতি দেয়।
দ্রুত পরিবর্তনশীল ডিজিটাল যুগে পত্রিকার প্রতি বিএম আল মোস্তফা পিন্টুর এই অনুরাগ এক অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে। তার গল্প প্রমাণ করে, প্রযুক্তি যতই আধুনিক হোক না কেন, সত্যিকারের পাঠকের কাছে কাগজের পাতার আনন্দ কখনো বিলীন হয় না।
Comments