Image description

মানবসভ্যতার প্রতিনিধি হয়ে কেউ একজন প্রথমবারের মতো আমাদের গোটা পৃথিবীকে একসঙ্গে দেখেছিলেন ১৯৭২ সালের ৭ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার)। সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তেই তোলা হয়েছিল বিখ্যাত ‘ব্লু মার্বেল' ছবিটি। পৃথিবীকে দেখার ক্ষেত্রে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি চিরতরে পাল্টে দেয় স্থির চিত্রটি।

চাঁদের পথে ছুটে চলা অ্যাপোলো ১৭ নভোযানের ভেতর থেকে মহাকাশচারী হ্যারিসন শ্মিট বলেছিলেন, ‘মনে হচ্ছে মহাশূন্যে যদি কখনো কিছু ভঙ্গুর আর নীল কিছু দেখা যায়, তবে সেটাই এখন আমাদের পৃথিবী।’ অ্যাপোলো ১৭-এর ক্রু-কমান্ডার ইউজিন সেরনান, কমান্ড মডিউল পাইলট রোনাল্ড ইভানস এবং লুনার মডিউল পাইলট হ্যারিসন ‘জ্যাক' শ্মিট-তাদের বাড়িকে (একমাত্র আবাসস্থল) দূরে সরে যেতে দেখতে দেখতে শেষবারের মতো চাঁদের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন। খবর বিবিসির। 

উড্ডয়নের প্রায় দেড় ঘণ্টা পর গ্রাউন্ড কন্ট্রোলকে শ্মিট বলেছিলেন,‘আমি সাউথ ক্যালিফোর্নিয়ার আলো দেখতে পাচ্ছি, বব। পৃথিবীতে মানুষের তৈরি নক্ষত্ররাজি যেন মহাকাশের আসল নক্ষত্রদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে!’

পেছনে ফিরে পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে সেরনান বলেছিলেন, ‘মেঘগুলো যেন শৈল্পিক কিছুর মতো, অসাধারণ ছবির মতো লাগে। কিছু কিছু ঘড়ির কাঁটার দিকে ঘুরছে… কিন্তু মেঘগুলো এতটাই পাতলা মনে হচ্ছে যে, সেগুলোর ফাঁক দিয়ে নিচের নীল জলরাশি দেখা যায়।’

এই ছবি একদিকে পৃথিবীর সৌন্দর্যের প্রতীক, অন্যদিকে তার ভঙ্গুর অবস্থানের প্রতিচ্ছবি-অজস্র নক্ষত্রপুঞ্জ ও গ্রহ-উপগ্রহে ঘেরা মহাশূন্যে, যেখানে এখন পর্যন্ত আর কোনো প্রাণের অস্তিত্ব আমরা পাইনি।

কিন্তু আমাদের এই গ্রহটি বদলের মধ্যেও আছে। যখন টেকটোনিক প্লেট ধীরে ধীরে ভৌগলিক মানচিত্র পাল্টাচ্ছে-তখন আরেকটি শক্তি, মানবজাতি নিজেই, দ্রুততার সঙ্গে পরিবেশকে রূপান্তর করছে। নগরায়ন, বন ধ্বংস, দূষণ এবং গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের ফলে পৃথিবীর রূপ পাল্টে যাচ্ছে।

তাহলে গত ৫০ বছরে কীভাবে বদলেছে ব্লু মার্বেল? অ্যাপোলো ১৭-এর ক্রুরা প্রথম ব্লু মার্বেল ছবিগুলো তোলেন একটি হাতের ক্যামেরা দিয়ে-হ্যাসেলব্লাড ৫০০ EL, যাতে ৭০ মিমি কোডাক ফিল্ম লোড করা ছিল। তারা ক্যামেরাটি একে অপরের মাঝে ঘুরিয়ে ব্যবহার করছিলেন, মুগ্ধ হয়ে পৃথিবীর সেই বিস্ময়কর দৃশ্য দেখছিলেন।

ওয়াশিংটন ডিসির স্মিথসোনিয়ান ন্যাশনাল এয়ার অ্যান্ড স্পেস মিউজিয়ামের কিউরেটর জেনিফার লেভাসার বলেন, ‘হ্যাসেলব্লাড ক্যামেরায় তোলা সব ছবিই অবিশ্বাস্যভাবে পরিষ্কার ও উজ্জ্বল ছিল।’

ব্লু মার্বেল আজ আর ঠিক সেই আগের মতো নেই। জলবায়ু পরিবর্তন ও মানবিক কার্যকলাপে পৃথিবী ভিন্নভাবে রঙিন হয়ে উঠছে-কখনও উজ্জ্বল, আবার কখনও ভীষণ মলিন। তবুও, আমরা এখনো এই নীল মার্বেলের বাসিন্দা। যতদিন তা আমাদের আছে, যত্ন নেয়া, সংরক্ষণ করা-এটাই আমাদের দায়িত্ব।