Image description

মানুষের চলমান জীবন স্থবির করে দেয় যানজট। যানজটের অন্যতম কারণ হচ্ছে পার্কিং নৈরাজ্য। শহরের অলিগলি, ফুটপাত, এমনকি প্রধান সড়ক পর্যন্ত দখল করে রাখা অবৈধভাবে পার্ক করা গাড়িগুলো এখন জনদুর্ভোগের অন্যতম কারণ। একদিকে বাড়ছে জনসংখ্যা ও যানবাহনের সংখ্যা, অন্যদিকে নগর ব্যবস্থাপনায় যথাযথ পরিকল্পনার অভাবের কারণে পার্কিং ব্যবস্থা হয়ে উঠেছে বিশৃঙ্খল। এই বিশৃঙ্খলা শুধু রাজধানীতে নয়, সারাদেশের শহরগুলোতে একই চিত্র। কিন্তু শৃঙ্খলা ফেরাতে কোনো উদ্যোগ নেই। ফলে এ চিত্র আরও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।

গতকাল প্রকাশিত সংবাদসূত্রে জানা যায়, কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক স্টেশনগুলোতে দীর্ঘদিন ধরেই চলছে চরম অব্যবস্থাপনা ও পার্কিং নৈরাজ্য। কোর্টবাজার, উখিয়া সদর, মরিচ্যা, কুতুপালং, থাইংখালী ও বালুখালী বাজার এলাকায় প্রতিদিনই লেগে থাকে তীব্র যানজট। কোথাও কার্যকর রোড ডিভাইডার নেই, কোথাও ফুটপাত দখল করে বসেছে ভাসমান দোকান ও অবৈধ পার্কিং। এতে জনজীবন প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। এদিকে ফুটপাতজুড়ে গড়ে উঠেছে ভাসমান দোকানপাট। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, কিছু অসাধু ইজারাদার ও মার্কেট মালিক এসব দোকানদারের কাছ থেকে দৈনিক বা মাসিক হারে ভাড়া আদায় করছে। ফলে একপ্রকার ‘অব্যবস্থাপনার বাজার’ গড়ে উঠেছে। শুধু তাই নয়, বাজার এলাকায় নির্ধারিত পার্কিং স্পট না থাকায় চালকরা রাস্তার উভয় পাশে ইচ্ছামতো গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখছে। এতে পথচারীদের ফুটপাত ছেড়ে মূল সড়কে চলতে হচ্ছে, যা তাদের জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। 

পার্কিংয়ের জন্য নির্ধারিত জায়গার অভাব ও আইন প্রয়োগে শিথিলতা শহরবাসীকে যেমন অসহায় করে তুলেছে, তেমনি অসচেতন চালকরা অবৈধ পার্কিংয়ের মাধ্যমে পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। ফুটপাতে গাড়ি পার্ক করায় পথচারীদের হাঁটতে হয় রাস্তার ওপর দিয়ে, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। এছাড়াও অ্যাম্বুলেন্স বা জরুরি যানবাহন সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে না পারায় অনেক সময় প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে। নাগরিক জীবনের স্বাভাবিক গতি যেন প্রতিনিয়ত হোঁচট খাচ্ছে এই নৈরাজ্যের গ্লানিতে।

দুঃখজনক হলেও সত্য, যে রাস্তাটি মানুষের হেঁটে চলার কথা, সেখানে এখন ঠাঁই নেয় চার চাকার জ্যামিতি। হাসপাতালের সামনে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রবেশপথ, এমনকি অগ্নিনির্বাপক বাহিনীর চলার রাস্তাও আজ বন্ধ হয়ে যায় অবৈধভাবে পার্ক করা একাধিক যানবাহনের কারণে। এ যেন শুধুই যানজট নয়, এ এক ভয়াবহ ব্যর্থতা, অব্যবস্থাপনার প্রতিকৃতি। শুধু চালক নয়, কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তাও এই নৈরাজ্যকে প্রশ্রয় দিয়েছে। 

নির্ধারিত পার্কিংয়ের অভাব, যথাযথ নিয়ম প্রয়োগের ঘাটতি এবং নাগরিক সচেতনতার অভাব মিলেই তৈরি করেছে এই বিষাক্ত চক্র। অথচ নগর পরিকল্পনায় যথাযথ দৃষ্টিভঙ্গি, প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট পার্কিং ব্যবস্থা এবং কঠোর আইন প্রয়োগই পারে এই চক্র ভাঙতে।

সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে যথাযথ পার্কিং সুবিধা গড়ে তোলা, অনলাইনে পার্কিং বুকিংয়ের ব্যবস্থা চালু করা এবং অবৈধ পার্কিংয়ের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ সময়ের দাবি। পাশাপাশি নাগরিকদের মধ্যেও সচেতনতা বাড়াতে হবে, রাস্তা পার্কিংয়ের জায়গা নয়। শহরের সৌন্দর্য ও নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে পার্কিং নৈরাজ্যের অবসান জরুরি। এই সমস্যাকে আর অবহেলা করার সুযোগ নেই।

সর্বোপরি বলা যায়, শহরের সৌন্দর্য, গতি ও গৌরব রক্ষা করতে হলে পার্কিং নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে গড়ে তুলতে হবে সামাজিক সচেতনতার আন্দোলন। নইলে শহর হারাবে তার প্রাণ, মানুষ হারাবে চলার পথ। আমরা যদি সত্যিই একটি বাসযোগ্য, মানবিক এবং শৃঙ্খলিত শহর চাই, তবে পার্কিং নৈরাজ্য রোধে এখনই নিতে হবে জরুরি উদ্যোগ। প্রতিটি গাড়িচালককে বুঝতে হবে- শুধু গাড়ি চালানোর দক্ষতাই নয়, পার্কিংও নাগরিক দায়িত্বের অংশ। পার্কিং নৈরাজ্য বন্ধ করতে আইনের কঠোর প্রয়োগ জরুরি।