Image description

বর্তমানে বিভিন্ন কারণে সামাজিক অস্থিরতা বিরাজ করছে। এর মধ্যে ‘কিশোর গ্যাং’ আতঙ্কের নাম। সংবাদপত্রের পাতা খুললেই কিশোর গ্যাংয়ের হাতে খুন-জখমের ঘটনা খবরের শিরোনাম হিসাবে দেখতে পাওয়া যায়। দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীসহ সারা দেশে কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা বৃদ্ধি পেলেও এদের বিরুদ্ধে কার্যত তেমন কোনো শক্ত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ফলে এদের তৎপরতা এখন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে।

কিশোররা বাসযোগ্য দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখবে- এটাই স্বাভাবিক। কিশোর শব্দটি কানে বাজলে কেমন যেন আলোকিত সমাজের স্বপ্ন চলে আসে চোখের সামনে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। ‘কিশোর গ্যাং’ বর্তমান দেশজুড়ে আতঙ্কের নাম। কিশোরদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সারা দেশের নগরকেন্দ্রিক কিশোর গ্যাং দিন দিন ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। এ কালচার সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক ও জাতীয় উদ্বেগের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। 

রাজধানীসহ দেশের প্রধান শহরগুলোতে কিশোর-তরুণরা বিভিন্ন গ্যাংয়ের মাধ্যমে অপরাধ করছে। তুচ্ছ ঘটনায় বখে যাওয়া কিশোরদের এক গ্রুপ হামলে পড়ছে অন্য গ্রুপের সদস্যদের ওপর। তাদের অপরাধ এমন পর্যায়ে চলে গেছে তার চিত্র একেবারে ভিন্ন। মাদক নেশায় জড়িয়ে পড়া থেকে শুরু করে চুরি, ছিনতাই, ইভটিজিং, মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে তারা। এমনকি অভ্যন্তরীণ দ্ব›দ্ব কিংবা অন্য গ্যাংয়ের সঙ্গে তুচ্ছ বিরোধকে কেন্দ্র করে খুন-খারাবি থেকেও পিছপা হচ্ছে না কিশোর অপরাধীরা। 

এমনকি ভাড়াটে হিসাবে তারা এখন মানুষ হত্যার মতো অপরাধে যুক্ত হচ্ছে। দুঃখজনক হলেও সত্য- সন্ধ্যা হলে ঢাকার রাস্তায় বের হতে ভয় লাগে। এই বুঝি ছুটে আসছে রামদা হাতে একদল কিশোর! সারাদেশে আতঙ্ক, ভয়! এ যেন অনিরাপদ অনিশ্চয়তার এক নগরী। জেল থেকে ছাড়া পাওয়া সন্ত্রাসী ও কতিপয় রাজনৈতিক দলের নেতারা নিজ নিজ এলাকায় আধিপত্য বিস্তারে কিশোরদের ব্যবহার করছে নানা অপরাধ অপকর্মে। এদের ঠেকাবে কে? লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না গ্যাং কালচারের। যার মূল কারণ গ্যাং লিডারদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা। দেশে অন্যতম এক আতঙ্কের নাম ‘কিশোর গ্যাং’। 

বর্তমানে এরা রাজধানীর সীমানা ছাড়িয়ে ছোট-বড় শহরগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে। বেপরোয়া মনোভাবের এসব কিশোর জড়িয়ে পড়ছে ভয়ঙ্কর সব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে। ফলে, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় প্রতিনিয়ত ঘটছে চুরি-ছিনতাইসহ হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা। বিশেষ করে মাধ্যমিক স্কুল পড়–য়ারা এসব গ্যাংয়ে জড়িয়ে পড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শিথিল পারিবারিক বন্ধন, মা-বাবার সন্তানকে সময় না দেয়া, সামাজিক অবক্ষয়, স্বল্প বয়সে স্মার্টফোনসহ উন্নত প্রযুক্তি উপকরণের নাগাল পাওয়া, সঙ্গদোষ ইত্যাদি কারণে কিশোরদের অপরাধে যুক্ত হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। 

এছাড়া কিশোরদের হাতে পর্যাপ্ত টাকা দেয়া, যৌক্তিকতা বিচার না করেই সব আবদার পূরণ করা এবং সন্তান কী করছে সে বিষয় পর্যবেক্ষণ না করায় অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে বলে সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করছেন। কিশোররা যেন অপরাধে জড়াতে না পারে এবং কেউ তাদের অসৎ কাজে ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে নজর দিতে হবে। 

এ জন্য সবার আগে পরিবার তথা মা-বাবাকে এগিয়ে আসতে হবে। সন্তানরা কী করে, কার সঙ্গে সময় কাটায়- এসব খেয়াল রাখতে হবে। সন্তানদের অযৌক্তিক আবদার পূরণ করার আগে ভাবতে হবে। স্কুল কারিকুলামের বাইরে শিশু-কিশোরদের খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে আকৃষ্ট করা এবং যুক্ত করার সুযোগ বাড়াতে হবে। সংস্কৃতিকে ব্যবহারের মাধ্যমে নিজেদের ধরাছোঁয়ার বাইরে রেখে ক্ষমতা আর আধিপত্য বজায় রাখছেন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা। ফলে পুলিশ আইন প্রয়োগ করতে গেলেই আসছে তাদের অদৃশ্য বাধা। এগুলো তাই আইন বা পুলিশি ব্যবস্থা দিয়ে বন্ধ করা কঠিন। 

সেক্ষেত্রে সমাজের ভেতর থেকেই বিপথগামী কিশোরদের সংশোধনের উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি কিশোর অপরাধ রুখতে ছিন্নমূল শিশু-কিশোরদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিতে হবে। যারা ইতোমধ্যে অপরাধ চক্রে জড়িয়ে গেছে, তাদের জন্য উপযুক্ত কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। এ ছাড়া কিশোরদের ধর্মীয় ও নৈতিক মূলবোধের শিক্ষা দেয়াটাও জরুরি। কিশোর অপরাধ নির্মূলে সবার আগে প্রয়োজন নজরদারি। এক্ষেত্রে পরিবার, সমাজ তথা রাষ্ট্রকেই ভ‚মিকা রাখতে হবে। এ জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো কঠোর হতে হবে।