Image description

চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন ২০২৫) মব, সহিংসতা, ছিনতাই, সীমান্ত হত্যাকাণ্ড এবং জেলখানায় মৃত্যুসহ বিভিন্ন ঘটনায় কমপক্ষে ২৫৯ জন নিহত হয়েছেন। হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস)-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে মোট ৪৬৮ জন মানুষ নিহত হয়েছেন, যা দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির চরম অবনতি নির্দেশ করে।

এইচআরএসএস-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ৬ সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে রাজনৈতিক সহিংসতা, মবসহ বিভিন্ন ঘটনায় কমপক্ষে ২০৯ জন নিহত হয়েছিলেন। এরপরের ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন ২০২৫) এই সংখ্যা আরও বেড়েছে। এছাড়াও, এই সময়ে কমপক্ষে ১ হাজার ৪২ জন নারী ও কন্যা শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, যার মধ্যে ৪৭৬ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।

দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘটে চলা 'মব ভায়োলেন্স' বা দলবদ্ধ সহিংসতার জেরে সাধারণ মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসেই দেশে অন্তত ১৪১টি দলবদ্ধ হামলার ঘটনা ঘটেছে, যাতে প্রাণ হারিয়েছেন ৮৩ জন। সম্প্রতি পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে নৃশংসভাবে হত্যা এবং খুলনার যুবদল নেতা মোল্লা মাহবুবুর রহমানকে গুলি করে ও রগ কেটে হত্যার ঘটনা এই সহিংসতার নতুন উদাহরণ।

অপরাধ বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই ধরনের সহিংসতার পেছনে রাজনীতির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদদ রয়েছে। তাদের মতে, অন্তর্বর্তী সরকার এই সহিংসতা দমনে দৃশ্যমান কোনো কঠোর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হচ্ছে এবং বিরোধী দলগুলোর ভেতর থেকেও সহিংসতা উসকে দেওয়ার অভিযোগ উঠছে।

পুলিশের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর জানিয়েছেন, অপরাধ প্রতিরোধে পুলিশ আন্তরিকভাবে কাজ করছে এবং দ্রুত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। তবে তিনি অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সামাজিক ও পারিবারিক অস্থিরতা থেকে বেরিয়ে আসার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।

অন্যদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ উমর ফারুক এই প্রবণতাকে রাষ্ট্রের ব্যর্থতা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, "গণপিটুনি একটি রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতার ফল। সরকার রাষ্ট্র পরিচালনায় ভয়াবহভাবে ব্যর্থ হওয়ায় এসব ঘটনা এখন লাগামহীন হয়ে উঠেছে।" তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, দ্রুত পদক্ষেপ না নেওয়া হলে নাগরিক জীবনে নিরাপত্তাহীনতা আরও বাড়বে।

মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আগের অবস্থানে ফেরেনি এবং সরকারও দুর্বৃত্তপনা রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখছে না, যা অপরাধীদের উৎসাহিত করছে। তাদের মতে, সরকারকে এখনই কঠোর বার্তা দিতে হবে, অন্যথায় দেশ ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকে যাবে।