Image description

সুন্দরবন উপকূলে খুলনার দাকোপ উপজেলার অধিকাংশ এলাকায় পানি লবণাক্ত। তাই বসানো যায় না গভীর নলকূপ। বর্ষাকালে পানিতে খুব একটা সমস্যা না হলেও শুকনো মৌসুমে মানুষকে মারাত্মক ভোগান্তি পোহাতে হয়। উপজেলা জুড়ে দেখা দেয় সুপেয় পানির চরম হাহাকার। এলক্ষে উপকূল মানুষের সুপেয় পানির কষ্ট দূর করতে সরকার গেলো ২০২২ - ২৩ অর্থবছরে উপকূলীয় অঞ্চলে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন প্রকল্পের আওতায় দাকোপ উপজেলায় ৫ হাজার ৮২৬ টি রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং সিস্টেম (ট্যাংক) বরাদ্দ দেয়। 

উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে যা পৌছে যাওয়ার কথা প্রান্তিক জনপদে মানুষের বাড়ি বাড়ি। কিন্তু বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য দেওয়া এ প্রকল্পে দেখা গেছে সীমাহীন দূর্ণীতি ও অনিয়মের চিত্র। ৩ হাজার লিটারের একটা ট্যাংক পেতে অধিকাংশ উপকার ভোগীকে গুনতে হয়েছে ৩ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত। যা মাত্র ১ হাজার ৫০০ টাকা সরকারি খরচ দিয়ে পাওয়ার কথা ছিলো উপকার ভোগীদের। অনেক অসহায় পরিবার টাকা না দিতে পেরে বঞ্চিত হয়েছে এ প্রকল্পের আওতা থেকে। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বিশেষ সুবিধায় ট্যাংক পেয়েছে অনেক সরকারি চাকরিজীবী, জনপ্রতিনিধি, প্রভাবশালী কিছু সাংবাদিকও রয়েছে সে তালিকায়। পৌরসভার জন্য বরাদ্দ না থাকলে ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে সরকারি এ ট্যাংক। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সুপেয় পানির সংকট দেখা দেয় এ উপজেলায় শুকনো মৌসুমে যা ধারনার বাহিরে। একারনে মানুষের বাড়তি চাহিদা বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য এ ট্যাংকের উপর। এ সুযোগে বিভিন্ন মাধ্যমে সাধরন মানুষের থেকে অতিরিক্ত অর্থ নিয়ে এসব ট্যাংক বিতরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আ’লীগের সাবেক দুই সংসদ সদস্যের ছত্র-ছায়ায় থাকা কতিপয় ইউপি সদস্য ও রাজনৈতিক নেতাদের মাধ্যমে সাধারণ উপকার ভোগীদের থেকে প্রতি ট্যাংক এর জন্য ৩ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনেকে টাকা দিয়ে ও পায়নি ট্যাংক। এমনকি ট্যাংকের গায়ে ‘ক্রয়-বিক্রয় শাস্তিযোগ্য অপরাধ’ লেখা থাকলেও দেদার চলেছে এই অবৈধ ব্যবসা। উপজেলার ৩০ জন জনপ্রতিনিধি ও ১০ রাজনৈতিক নেতার বাড়িতে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, তাদের প্রত্যেকের বাড়িতেই সরকারি এই পানির ট্যাংক আছে।

এছাড়াও সরকারি ঘর এবং পানির ট্যাংক দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে প্রতারণার শিকার হয়ে গত বছরের ২৯ নভেম্বর খুলনার দাকোপে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আমলি আদালতে মামলা করেন বানীশান্তা ইউনিয়নের বাসিন্দা হাফিজুল শেখ। মামলায় খুলনা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ননী গোপাল মণ্ডল ও তাঁর ছেলে দীপ্ত মণ্ডলসহ চারজনকে আসামি করা হয়েছে। আ’লীগ সরকার পতনের পর থেকে সাবেক এ সংসদ সদস্য ও তার ছেলে ভারতে অবস্থান করছে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তথ্যমতে, প্রতিটি পানি সংরক্ষণ ইউনিট (ট্যাংক) স্থাপনে খরচ ধরা হয়েছে ৪২ হাজার টাকা। এর মধ্যে ট্যাংক, প্রয়োজনীয় পাইপ, ট্যাপ, পাকা পাটাতন নির্মাণ থেকে শুরু করে সব ধরনের পরিবহন, শ্রমিক খরচ, ভ্যাট ট্যাক্স সবই আছে। এরই মধ্যে ৪ হাজার ৬৯১ টি  ট্যাংক বিতরণ করা শেষ হয়েছে। সাতটি ধাপে এই রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং সিস্টেম (ট্যাংক) স্থাপন করা হ”েছ। প্রথম ধপে ৮৪২ টি, দ্বিতীয় ধাপে ৮৭৬ টি, তৃতীয় ধাপে ৮৫৬ টি, চতুর্থ ধাপে ৭৮৯ টি, পঞ্চম ধাপে ৮০৫ টি, ষষ্ঠ ধাপে ৮৪৯ টি খাতা কলমে থাকলেও অদৃশ্য কারনে তা এখনো উপকার ভোগীদের মাঝে পৌছায়নি। এবং সপ্তম ধাপের ৮০৯ টির মধ্যে ৫২৩ টি ট্যাংক বিতরন করা হয়েছে। বাকিগুলোর কাজ চলমান রয়েছে। তবে মেয়াদ কালের মধ্যে বিতরণের কথা থাকলেও ঠিকাদারদের গাফিলতিতে তা এখনো সম্ভব হয়নি।

উপজেলার কালাবগী ০৮ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা জামাল গাজী অভিযোগ করে বলেন, টাকা যে দিতে পারছে সে ট্যাংক পেয়েছে আমরা গরীব মানুষ কতো জনকে যে বলেছি বাবা কেউ একটা ট্যাংক দেয়নি। এমন বাড়ি আছে এক বাড়িতে দুই তিনটা পেয়েছে কিন্তু গরীবের কঁপালে একটাও জোটেনা।

দাকোপ উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, বিষয়টা নিয়ে আমারা ও চাপে আছি। যেভাবে আমাদের কাছে লিষ্ট আসছে সেভাবে বিতরণ করেছি। টাকা পয়সা কিছু লেনদেন হয়েছে এটা মিথ্যা নয় তবে আমাদের অফিস এসবের সাথে জড়িত নয়। টাকা পয়সার ব্যাপার নিয়ে আমাদের বিরক্ত করবেন না। 

তিনি আরো বলেন, এমন ও হয়েছে মানুষ আমার অফিসে টাকা দিয়ে আমাকে ম্যানেজ করতে আসছে। অনেকে জোর করে ট্যাংকের জন্য হাতে টাকা দিতে চেয়েছে কিন্তু দিতে পারেনি। এমন হতে পারে কেউ খুশি হয়ে ট্যাংক পাওয়ার পর মিষ্টি খেতে অফিসের কর্মীদের কিছু দিয়ে যেতে পারে। এর বাহিরে আমাদের কেউ কোন অনৈতিক লেনদেনের সাথে জড়িত না।