Image description

মাদারীপুরে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের কার্যক্রম। জনবল সংকটে বেশির ভাগ সময়ই ভবনে ঝুলছে তালা। আর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে দায়িত্বরত চিকিৎসকের অনুপস্থিতিতে ব্যহত হচ্ছে কাঙ্খিত সেবা। যদিও এ ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর।

সরেজমিনে দেখা যায়, মাদারীপুর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে রুমের ভেতর সারিবদ্ধ ভাবে বসে আছেন রোগীরা। যেখানে সকাল ৯টা থেকেই কর্তব্যরত একজন চিকিৎসক থাকার কথা। বেলা সাড়ে ১১টা বাজলেও নেই তার দেখা। এতে প্রত্যন্ত এলাকা থেকে আসা রোগীরা ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষায় থেকে পড়েন বিড়ম্বনায়। অথচ, রুমের ভেতর জ্বলছে লাইট, ঘুরছে ফ্যান। রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ, সরকারি নিয়মের নির্ধারিত সময়ে একদিনও অফিসে আসেন না এখানকার দায়িত্বরত ডা. সাবিনা বিনতে আলমগীর। প্রায় ১২ টার দিকে অফিসে ঢোকেন তিনি। ফলে দীর্ঘক্ষন অপেক্ষা করে অনেকেই চলে যান প্রাইভেট ক্লিনিকে। কেউ আবার ডা. সাবিনা বিনতে আলমগীরের ব্যক্তিগত চেম্বারে অর্থের বিনিময়ে নেন সেবা। গত একমাস ধরে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এমন চিত্র। 

এদিকে ইউনিয়ন পর্যায়েও স্বাস্থ্যসেবা মানেরও চরম বাজে অবস্থা। একদিকে নেই পর্যাপ্ত চিকিৎসক, অন্যদিকে প্রায় এক বছর ধরে ওষুধ সরবারহ বন্ধ। দুই কারনে কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত ইউনিয়নবাসী। আর জনবল সংকটে অধিকাংশ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে ঝুলছে তালা। সপ্তাহে দুইএকদিন ভবন খোলা হলেও মিলছেন না সেবা।

জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলার ৫৯টি ইউনিয়নের মধ্যে ৪৮টিতে রয়েছে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র এবং ৯টি রয়েছে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র। এখানে ২৪ ঘন্টা নরমাল ডেলিভারী ও সরকার নির্ধারিত সকাল ৯টা থেকে দুপুর সাড়ে ৩টা পর্যন্ত মা ও শিশু, নবজাতকদের সেবা দেওয়ার কথা। এই অফিসগুলোর ১১২৬টি জনবলের বিপরীতে খালি আছে ৪৯৭টি পদ।

পূর্ব চিড়াইপাড়া থেকে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে সেবা নিতে আসা হাসিয়া বেগম বলেন, ‘এখানকার ডাক্তারকে না পেলে তার ব্যক্তিগত চেম্বারে গিয়ে অর্থের বিনিময়ে প্রায়ই সেবা নেই। ১১টার বেশি বাজে কিন্তু তার কোন দেখাই পাচ্ছি না সরকারি হাসপাতালে। আমি আমার মেয়ের জন্য এখানে সেবা নিতে এসেছি।’

সেবা নিতে আসা পাকদি নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকার পুত্রবধু শান্তা আক্তার ও তার শাশুড়ি রোকেয়া বেগম বলেন, ‘বসে আছি দেড়ঘন্টারও বেশি সময় ধরে। কিছুই বলার নেই। এর আগেও একদিন এখানে এসেছিলাম, তখনও ডা. সাবিনা ম্যাডামকে পাইনি। পরে বাধ্য হয়ে অন্যত্র চলে গেছি।’

পানিছত্র এলাকার বাসিন্দা বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘শিশু বাচ্চা নিয়ে এখানে গরমের বসে থাকা অনেক কষ্টের। সাড়ে ১১টা বাজে এখনও ডাক্তার এখানে আসেনি। সরকারি হাসপাতালে এমন সেবা মেনে নেয়া যায় না।’

এদিকে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের বিষয়েও অভিযোগের শেষ নেই রোগীদের। মাদ্রা গ্রামের বাসিন্দা চন্দনি বেগম বলেন, ‘এখানে ডাক্তার সারাদিনেও আসেনি। অফিস সহকারি জানিয়েছে ডাক্তার জেলা অফিসে মিটিং-এ আছে। তার এই অনুপস্থিতি থাকার বিষয়ে আগে কোন বার্তা দেয়নি। সরকারিভাবেও ওষুধ পাই না অনেকদিন।’

জুলিয়া বেগম বলেন, ‘অনেক দুর থেকে সেতারা সাহিনা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসেছি, কিন্তু কোন ওষুধ বা কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছি না। ডাক্তার একজন ছিল এমবিএস সপ্তাহে একদিন আসতো, বর্তমানে তিনিও নাই। এতে আমাদের কষ্ট আর দুর্ভোগের শেষ নাই।’

মাদ্র এলাকার বাসিন্দা ভ্যানচালক কেরামত মুন্সি ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, ‘সুন্দর চকচকে ভবন নির্মাণ করেছে রোগীদের সেবা দেয়ার জন্য। কিন্তু কোন সেবাই পাওয়া যাচ্ছে না। একজন ভাল চিকিৎসক এখানে সপ্তাহে একদিন আসতো। তিনিও এখন আর আসেন না। আর ওষুধপত্রও মিলছে না এখানে।’

জরুরী কাজের কারনে অফিসে আসতে দুই এক দিন দেরি হয়  বলে দাবি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের চিকিৎসক ডা. সাবিনা বিনতে আলমগীরের। তিনি বলেন, কখনও সাড়ে ৯টা, কখনও ১০টা বাজে অফিসে ঢুকতে। মেয়েকে স্কুলে দিয়ে আসতে হয় কিংবা জেলা অফিসে কাজ থাকে। এজন্য নির্ধারিত সময়ে আসতে পারি না। তবে, প্রতিদিন যে এই সমস্যা হয়, তা কিন্তু নয়। এখানে আসা রোগীদের পর্যাপ্ত সেবা দিয়ে থাকি। কেউ সেবা না নিয়ে ফিরে যায় না। আমি রোগীদের কাঙ্খিত সেবা দিয়ে থাকে। 

মাদারীপুর জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. মতিউর রহমান বলেন, ‘সেবার মান বাড়াতে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ঘাটতি জনবল পুরনে বিভিন্ন মিটিং-এ আলোচনা করা হয়। মন্ত্রনালয়েও চিঠি দেয়া হয়েছে একাধিকবার। আশা করছি দ্রুতই এই সমস্যার সমাধান হবে। পাশাপাশি দায়িত্বরত কেউ সরকার নির্ধারিত সময়ে অফিস না করলে উপযুক্ত প্রমান পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’