“প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে ভরা বেকি লেক ভ্রমণপিপাসুদের আকর্ষণ করছে”

মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার পাহাড়ি এলাকার কোলে অবস্থিত বেকি লেক এখন ভ্রমণপিপাসুদের অন্যতম গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। সবুজ পাহাড় ও গাছগাছালির বেষ্টনীতে থাকা এই লেক স্থানীয় মানুষজন ছাড়াও বাইরের দর্শনার্থীদের কাছে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
লেকটির চারপাশে শান্ত পরিবেশ, নীল পানির সাথে মিলেমিশে তৈরি করেছে নয়নাভিরাম দৃশ্য। শান্ত পানির নীলাভ বিস্তার, চারপাশে সবুজ গাছের সারি আর আকাশের প্রতিচ্ছবি লেককে করে তোলে অপূর্ব সৌন্দর্যমণ্ডিত। ভোরের আলোয় যখন পানির উপর সোনালি রোদ ঝিলমিল করে, তখন লেক যেন এক টুকরো স্বর্গের ছবি আঁকে। সন্ধ্যায় সূর্য ডোবার সময় আকাশের লাল-কমলা রঙ পানির বুকে প্রতিফলিত হয়ে সৃষ্টি করে মোহনীয় দৃশ্য।
পাখির কিচিরমিচির, হালকা বাতাসের স্পর্শ আর নৌকায় ভেসে চলার অনুভূতি লেকের সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে তোলে। লেক শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধারই নয়, মানুষের মনকে শান্ত ও নির্মল করে। প্রকৃতির কোলে বসে লেকের দিকে তাকালে মনে হয়—এ যেন নিস্তব্ধতার মাঝে এক অনন্ত শান্তির ঠিকানা।
প্রায় ২৭ একর জমিতে বিস্তৃত এই লেকের চারপাশে ছড়িয়ে থাকা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এটিকে বিশেষ করে তুলেছে। পানিতে ফুটে থাকা সাদা ও লাল শাপলা ফুল এই লেকের প্রধান আকর্ষণ।
শীত মৌসুমে বিভিন্ন ধরনের অতিথি পাখির আগমন দেখা যায়। পাশাপাশি বক, হাসপাখি, সারসসহ কিছু বিরল প্রজাতির পাখির আনাগোনা থাকে বছরজুড়ে, যা পাখিপ্রেমীদের জন্য বাড়তি আনন্দের বিষয়।এছাড়াও আশপাশে রয়েছে চা শ্রমিকদের জীবনধারার চিত্র, যা পর্যটকদের কাছে এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা দেবে।
কিন্তু এমন অপার সৌন্দর্যের এই লীলাভূমিতে পর্যটক কম আসার কারণ জানতে চাইলে পাথারিয়া চা বাগানের বাসিন্দা ও চা শ্রমিকরা বলেন, ‘এই লেকটা অনেক পুরনো। আগে শুধু আমরাই যেতাম, এখন বাইরে থেকে টুকটাক লোকজনও আসেন। আমরা চাই সরকার বা স্থানীয় প্রশাসন একটু উদ্যোগ নিক। তাহলে এখানে অনেক পর্যটক আসবে।’
স্থানীয় যুবক কাইয়ুম আহমদ বলেন, ‘এই এলাকায় অনেক সুন্দর জায়গা আছে, কিন্তু প্রচারের অভাবে কেউ জানে না। যদি এই বেকি লেককে ঘিরে কিছু উন্নয়ন হয়, তাহলে বড়লেখার নাম সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে।’
নিউ সমনবাগ চা বাগানের ব্যবস্থাপক শাহিদ নেওয়াজ বলেন, ‘বেকি লেককে যদি একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা যায়, তাহলে তা আমাদের জন্য অত্যন্ত উপকারী হবে। এতে স্থানীয় অর্থনীতি যেমন চাঙ্গা হবে, তেমনি কর্মসংস্থানের সুযোগও বাড়বে।’
বেকি লেক কেন্দ্রিক পর্যটনের সম্ভাবনা অনেক। এখান থেকে গড়ে তোলা যেতে পারে একটি সংরক্ষিত পর্যটন এলাকা, যেখানে প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা করে পর্যটন পরিচালনা করা যাবে। এখানে নির্মাণ করা যেতে পারে একটি ছোট দর্শন টাওয়ার, যাতে পর্যটকরা লেক ও চা বাগান একসাথে উপভোগ করতে পারেন। তৈরি হতে পারে নৌকা ভ্রমণের ব্যবস্থা, যাতে পর্যটকরা শাপলা ফুলের মাঝে ঘুরে দেখতে পারেন লেকের সৌন্দর্য। এছাড়া আশপাশের এলাকায় গড়ে তোলা যেতে পারে স্থানীয় হস্তশিল্পের দোকান, খাদ্যকেন্দ্র এবং পর্যটকদের জন্য বিশ্রামাগার। এতে স্থানীয় জনগণের আয়ের পথ সৃষ্টি হবে এবং নতুন কর্মসংস্থান গড়ে উঠবে। স্থানীয় তরুণরা গাইড হিসেবে কাজ করতে পারবে, গড়ে উঠতে পারে ছোট ছোট উদ্যোগ, যা বৃহৎ অর্থনৈতিক গতিশীলতা সৃষ্টি করবে বলে আশা করছেন স্থানীয়রা। তাই প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য নিয়ে লুকিয়ে থাকা এই লেক এখন দিন কাটাচ্ছে আপনার অপেক্ষায়।
যেভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে সরাসরি বাসযোগে বড়লেখায় যাওয়া যায়। ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকা। ট্রেনে যেতে চাইলে ঢাকার কমলাপুর অথবা বিমানবন্দর স্টেশন থেকে কুলাউড়া স্টেশনে নেমে যেতে হবে। ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ৩২০ থেকে ৭৪০ টাকা। সিলেট থেকে যাত্রা করলে, সকালে কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনে কুলাউড়া স্টেশনে পৌঁছানো যায়। কুলাউড়া থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা বা ভাড়াকৃত গাড়িতে করে বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ বাজারে যেতে হবে। ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ৬০ টাকা। সেখান থেকে অটোরিকশায় সমনবাগ চা বাগান পেরিয়ে পৌঁছাতে হবে পাথারিয়া চা বাগানের লেকে। তাছাড়াও লেকটিতে পৌঁছাতে আরো কিছু রাস্তা অনুসরণ করতে পারেন তা হলো দক্ষিণভাগ থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় রশিদাবাদ চা বাগানে যেতে হবে তারপর স্থানীয়দের সহযোগিতায়া কিছু পথ এগিয়ে গেলে পৌঁছে যাবেন আপনার গন্তব্য।
এছাড়াও এই রাস্তা পেরুতে সাহায্য নিন গুগল ম্যাপের! যদি আপনি বেকি লেক, বড়লেখা যেতে চান, তাহলে গুগল ম্যাপ আপনার বিশ্বস্ত সহযাত্রী হতে পারে। আপনাকে শুধু সার্চ বক্সে লিখতে হবে: “বেকি লেক বড়লেখা” — আর বাকি পথ দেখাবে গুগল।
থাকা-খাওয়ার খরচ:
বড়লেখায় প্রতিদিন থাকার জন্য আপাতত ভালোমানের কোনো হোটেল নেই । তবে খাওয়া দাওয়ার জন্য ভালো চাইনিজ হোটেল রয়েছে। এছাড়া রাত্রি যাপন করার জন্য কুলাউড়ায় বাসা ভাড়া নেওয়া যায়। এক রাত ভাড়া পড়বে ৩০০ থেকে ৮০০শ টাকা।
Comments