গন্ডামারা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জেটিঘাটে নৌকা ভিড়তে বাঁধা, জেলেদের বিক্ষোভ

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার গন্ডামারা এস এস পাওয়ার প্লান্টের পশ্চিম বড়ঘোনা জেটিঘাট দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় জেলেদের কর্মব্যস্ততার প্রাণকেন্দ্র। প্রায় সময় এ জেটিঘাট থেকে তিন হাজারেরও বেশি জেলে নৌকা ও সাম্পান নিয়ে গভীর সাগরে মাছ আহরণে যান এবং জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন।
কিন্তু সম্প্রতি এস আলম গ্রুপের কয়লাবাহী লাইটার জাহাজ ভিড়ানোকে কেন্দ্র করে এ জেটিঘাটে জেলেদের জীবিকা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জাহাজের ধাক্কায় বসানো জাল ছিঁড়ে যাওয়া, রাতের আঁধারে সাম্পানে ধাক্কা লেগে দুর্ঘটনা ঘটার মতো ঘটনাও নিত্যদিনের হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনকি নৌকা ডুবিয়ে দেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগও তুলেছেন স্থানীয় জেলেরা।
এই প্রেক্ষাপটে সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে গন্ডামারা পশ্চিম বড়ঘোনা জেটিঘাট এলাকায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্ত জেলেরা।
বিক্ষোভ প্রতিবাদে অংশ নেওয়া জেলেরা অভিযোগ করে বলেন, জেটিঘাট থেকে মাছ ধরতে প্রতিদিন ২০-৩০ কিলোমিটার দূরে যেতে হয়। সাগর থেকে মাছ নিয়ে ফেরার সময় প্রকল্পের লোকজন মাছ দাবি করে, না দিলে নৌকা ভিড়তে দেওয়া হয় না। এতে তাদের জীবিকা হুমকির মুখে পড়ছে। এ ছাড়া ইলিশ মৌসুমে চার মাসব্যাপী ব্যবসা-বাণিজ্যের মূল ভরসা এই ঘাট। কিন্তু নানা বাধার কারণে এখন এ অঞ্চলের অর্থনীতি মারাত্মক সংকটে পড়ছে।
জেলেরা আরও বলেন, প্রকল্পের কারণে তাদের ঐতিহ্যবাহী জীবিকা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। তাই অবিলম্বে নৌকা ও সাম্পান নিরাপদে জেটিতে ভিড়ার নিশ্চয়তা প্রদান এবং স্থানীয়দের জন্য এস আলম গ্রুপে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার দাবি জানান তারা।
এস এস পাওয়ার প্ল্যান্ট সূত্রে জানা যায়, এই পাওয়ার প্ল্যান্টটি দেশের বৃহত্তম একটি প্রজেক্ট। এই প্রজেক্ট নির্মিত হওয়ার পর জেটিঘাটটি শুধু মাত্র প্রজেক্ট এর কাজের স্বার্থে নির্মিত হয়েছে। এই জেটিঘাট এলাকাটি প্রকল্পের নিজস্ব জায়গা। স্থানীয় কয়েকজন জেলেরা এই ঘাটে বোট এবং জাল বসানোর ফলে লাইটার জাহাজ গুলো কয়লা নিয়ে জেটিতে ভিড়তে পারে না, ইতিমধ্যে ড্রেজিং এর কাজ চলতেছে। প্রতিনিয়ত লাইটার জাহাজ গুলো জেটিতে আসতে শুরু করেছে। অনেক সময় আমাদের লাইটার জাহাজ গুলোতে চুরি ডাকাতি সংঘটিত হচ্ছে। এই সাম্পান (বোট) বা জাল বসানোর কারনে প্রজেক্টের অপারেশন কাজের ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। নিরাপত্তার স্বার্থে আপাতত উক্ত জেটিতে কোন রকম জাল বসানো বা বোট ভিড়ানো বন্ধে উক্ত এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে গন্ডামারা এস এস পাওয়ার প্লান্টের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, “জেটিঘাট এলাকাটি প্রকল্পের নিজস্ব জায়গা। বর্তমানে ড্রেজিংয়ের কাজ চলমান রয়েছে। জেলেদের নৌকা ভিড়তে দিলে কয়লাবাহী লাইটার জাহাজে বিঘ্ন ঘটে। তাছাড়া অনেক সময় জাহাজে চুরি-ডাকাতির ঘটনাও ঘটে। প্রকল্পের নিরাপত্তা ও কাজের স্বার্থে ওই জেটিতে জাল বসানো বা নৌকা ভিড়ার অনুমতি নেই।”
এ সময় মানববন্ধনে অংশ নেন স্থানীয় জেলে তারেক, আতা উল্লাহ, হামিদুর রহমান, ইউপি সদস্য মো. জহির, মোঃ আমিন, শফিকুর রহমান, রবি, নেজাম, কলিম উল্লাহ, মোজাফ্ফর, নাছু সহ অর্ধশতাধিক জেলে।
Comments