মানবকন্ঠে সংবাদ প্রকাশের পর হাদা টিলা এলাকায় উপজেলা প্রশাসনের অভিযান

সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের হাদা পান্ডব এলাকায় অবস্থিত ফরেস্টের সংরক্ষিত বনভূমিতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। অভিযানে চারটি স্টিল বডি নৌকা আটক করা হয়েছে।
সম্প্রতি জাতীয় দৈনিক মানবকন্ঠে কর্তৃপক্ষ ঢিলেঢালা লুট হচ্ছে হাদা টিলা শিরোনামে লুটপাটের বিষয়ে সংবাদ প্রকাশের পর আজ ২৬ আগষ্ট মঙ্গলবার উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে হাদা পান্ডব এলাকায় এ অভিযান পরিচালিত হয়।
অভিযানে নেতৃত্ব দেন, ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ তরিকুল ইসলাম। অভিযানে সহায়তা করেন, ছাতক থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মঞ্জুরুল ইসলাম, ছাতক বনবিট কর্মকর্তা আয়ুব আলী এবং আনসার সদস্যবৃন্দ।
অভিযান চলাকালে প্রশাসনের উপস্থিতি টের পেয়ে বনভূমি দখল ও নদীসম্পদ লুটে জড়িত চক্রের সদস্যরা পালিয়ে যায়। ফলে কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। তবে ঘটনাস্থল থেকে তাদের ব্যবহৃত চারটি স্টিল বডি নৌকা পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে জব্দ করা হয়। এসব নৌকা ব্যবহার করে তারা বালু পাথর উত্তোলন ও বনাঞ্চলের ভেতরে যাতায়াত করত বলে জানা গেছে।
সংরক্ষিত বনভূমির দাগ নম্বর ১৫০৬ এর অন্তর্ভুক্ত হাদা টিলা দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন চক্রের দখলদারিত্ব, প্রাকৃতিক সম্পদ লুটপাট এবং পরিবেশ ধ্বংসের শিকার হয়ে আসছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, প্রভাবশালী মহলের আশ্রয়ে এই দখলদাররা বহুদিন ধরে অবাধে পাথর উত্তোলন ও বনায়ন ধ্বংসের কাজ চালিয়ে আসছে।
অভিযান শেষে ইউএনও মোহাম্মদ তরিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, “সংরক্ষিত হাদা টিলা বনভূমিতে অবৈধ অনুপ্রবেশ ও সরকারি সম্পদ দখলের চেষ্টার বিরুদ্ধে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট বিট কর্মকর্তাকে নিয়মিত একাধিক মামলা দায়েরের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সরকারি সম্পদ রক্ষায় এ ধরনের অভিযান চলমান থাকবে। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। জনস্বার্থে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।”
তিনি আরও বলেন, স্থানীয় প্রশাসনের নিয়মিত নজরদারি ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত থাকলে এই এলাকায় আর কোনো দখলদার গোষ্ঠী মাথা তুলতে পারবে না।
অভিযানের খবরে এলাকায় স্বস্তি ফিরেছে। স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল হান্নান জানান, “আমাদের চোখের সামনেই হাদা টিলার সবুজ বন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু আমরা অসহায় ছিলাম। আজকের এই অভিযান আমাদের আশা জাগিয়েছে। আমরা চাই, এই কার্যক্রম নিয়মিত হোক।”
একইভাবে স্থানীয় যুবক সাইফুল ইসলাম বলেন, “যদি নিয়মিতভাবে প্রশাসন এভাবে অভিযান চালায়, তাহলে দখলদাররা আর সাহস পাবে না। পরিবেশ ও প্রকৃতি রক্ষায় এটা খুবই জরুরি।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, হাদা টিলা এলাকার বনভূমি শুধু স্থানীয় মানুষের জীবন-জীবিকার সঙ্গে জড়িত নয়, বরং এটি পুরো অঞ্চলের পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অবাধে পাথর উত্তোলন ও বন উজাড়ের কারণে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে, যা দীর্ঘমেয়াদে ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে।
ছাতক উপজেলার এই অভিযানে চারটি নৌকা আটক করার ঘটনাটি তাই কেবল একটি প্রশাসনিক পদক্ষেপ নয়, বরং পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় সরকারের অঙ্গীকারের প্রতিফলন।
স্থানীয়রা আশা করছেন, এ ধরনের অভিযান চলমান থাকলে অবৈধ দখলদাররা আর সাহস পাবে না, বরং সংরক্ষিত বনভূমি ও নদীসম্পদ রক্ষা পাবে।
Comments