Image description

চুয়াডাঙ্গার "দেশ ক্লিনিক"-এ অ্যাপেন্ডিসাইটিসের অস্ত্রোপচারের সময় রোগীর পায়ুপথের গুরুত্বপূর্ণ নালি কেটে ফেলার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ক্লিনিকটির অপারেশন কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে এবং পুরো বিষয়টি তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

ভুল চিকিৎসার শিকার ভুক্তভোগী মিনারুল ইসলাম বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। এই অবহেলার কারণে তার বাবা নজরুল ইসলাম ক্লিনিক মালিক, ম্যানেজার এবং দুজন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে চুয়াডাঙ্গা আমলী আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, রোগীর এই করুণ পরিণতি এবং গণমাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশিত হলে চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন ডা. হাদী জিয়া উদ্দিন আহমেদ একটি আজ সোমবার টিম নিয়ে দেশ ক্লিনিকে অভিযানে যান। 

তিনি জানান, পরিদর্শনের সময় অপারেশন থিয়েটারে কিছু গুরুতর অসংগতি লক্ষ্য করা গেছে, যার কারণে ক্লিনিকের অপারেশন কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ক্লিনিকটিকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

সিভিল সার্জন আরও জানান, এই ঘটনা তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি আগামী ৫ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে। প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

যদিও ভুক্তভোগীর পরিবার আদালতে মামলা দায়ের করেছে, চুয়াডাঙ্গার স্বাস্থ্য বিভাগ এখনো অফিশিয়ালভাবে মামলার কোনো কাগজপত্র বা আদালতের কোনো নির্দেশনা পায়নি। 

এ বিষয়ে সিভিল সার্জন বলেন, "আমরা শুনেছি মামলা হয়েছে, তবে অফিসিয়াল কোনো কাগজপত্র এখনো আমাদের হাতে আসেনি।"

গত ১২ জুন আলমডাঙ্গার রামনগর গ্রামের মিনারুল ইসলামের অ্যাপেন্ডিসাইটিসের অস্ত্রোপচার করা হয় চুয়াডাঙ্গা শহরের হাসপাতাল রোডে অবস্থিত দেশ ক্লিনিকে। অপারেশনের পর তার অবস্থার অবনতি হলে প্রথমে তাকে বাড়ি ফিরিয়ে নেওয়া হয় এবং পরে আবারও ঐ ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। কিন্তু সেখানে যথাযথ চিকিৎসা না পেয়ে স্বজনরা তাকে অন্যত্র সরিয়ে নিতে চাইলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাধা দেয়। ৪ আগস্ট স্বজনদের সহায়তায় মিনারুলকে ঢাকার ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকরা নিশ্চিত করেন যে, অপারেশনের সময় রোগীর পায়ুপথের গুরুত্বপূর্ণ নালি কেটে ফেলা হয়েছে। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

মামলা দায়ের:
ভুক্তভোগীর বাবা নজরুল ইসলাম গত বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) ভুল অপারেশনের অভিযোগে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামিরা হলেন: দেশ ক্লিনিকের পরিচালক হাসিবুল হক শান্ত, ক্লিনিকের ম্যানেজার ইয়াকুব আলী, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. মশিউর রহমান এবং সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. এহসানুল হক তন্ময়। 

এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, ভুল অপারেশনের বিষয়টি ধামাচাপা দিতে পরিবারকে প্রথমে এক লাখ এবং পরে দুই লাখ টাকার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।

এই ঘটনাটি চুয়াডাঙ্গায় চিকিৎসা সেবার মান এবং বেসরকারি ক্লিনিকগুলোর কার্যক্রম নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তৈরি করেছে। ভুক্তভোগী পরিবারের ন্যায়বিচার এবং রোগীর দ্রুত আরোগ্য কামনা করছেন স্থানীয়রা।