Image description

যশোর-৬ (কেশবপুর) আসন বিভাজনের প্রস্তাবে ক্ষোভে ফুঁসছে কেশবপুর উপজেলার সর্বস্তরের মানুষ। অভয়নগর উপজেলার পায়রা ইউনিয়নের সুকৃতি কুমার মন্ডল নির্বাচন কমিশনে আবেদন করে কেশবপুরের তিনটি ইউনিয়নকে মনিরামপুরের ছয়টি ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত করে অভয়নগরের সাথে মিশিয়ে নতুন আসন গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন। এ বিষয়ে আগামী ২৫ আগস্ট গণশুনানি অনুষ্ঠিত হবে। প্রস্তাবটি প্রকাশ্যে আসতেই কেশবপুরে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

স্থানীয়রা মনে করছেন, কেশবপুরের স্বতন্ত্র মর্যাদা ও ঐতিহাসিক পরিচয় নষ্ট করতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। তারা প্রশ্ন তুলছেন, কে এই সুকৃতি কুমার মন্ডল, এবং কেন তিনি কেশবপুরের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যকে বিকৃত করছেন? বাজার, অফিস, চায়ের দোকানে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এখন কেশবপুর আসন অক্ষুণ্ণ রাখার দাবি। অনেকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, প্রয়োজনে নির্বাচন কমিশন অফিস ঘেরাও কর্মসূচি দেওয়া হবে।

ভবদহ সমস্যার অজুহাত অসত্য
আবেদনকারী সুকৃতি কুমার মন্ডল দাবি করেছেন, কেশবপুরের পাঁজিয়া, সুফলাকাটি ও গৌরীঘোনা ইউনিয়ন ভবদহ সুইস গেটের সঙ্গে সংলগ্ন হওয়ায় জলাবদ্ধতার সমস্যা হয়। বিশেষজ্ঞরা এ দাবিকে অসত্য বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তারা বলছেন, জলাবদ্ধতার মূল কারণ নদীর নাব্যতা হ্রাস ও অপরিকল্পিত মৎস্য ঘের। হরি নদী থেকে ঘ্যাংরাইল নদী পর্যন্ত ৪৯ কিলোমিটার খনন করা হলে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। ভবদহের সঙ্গে কেশবপুরের সম্পর্কের কোনো যৌক্তিক ভিত্তি নেই।

ভৌগলিক ও জনসংখ্যার যৌক্তিকতা
কেশবপুর যশোর, সাতক্ষীরা ও খুলনার মধ্যবর্তী কৌশলগত স্থানে অবস্থিত। অভয়নগরে যেতে মনিরামপুর অতিক্রম করতে হয়, ফলে অভয়নগরের সঙ্গে যুক্ত করা ভৌগলিকভাবে অসঙ্গত। কেশবপুরের জনসংখ্যা ও ভোটার সংখ্যা একটি পূর্ণাঙ্গ সংসদীয় আসনের জন্য যথেষ্ট।

ইতিহাসের পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা
এর আগে কেশবপুর আসন বিভক্ত করার চেষ্টা ব্যাপক আন্দোলনের মুখে বাতিল হয়েছিল। স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন, এবারও একই ষড়যন্ত্র চলছে। এস এম রাসেদুল ইসলাম বলেন, “ভবদহ সমস্যা ৪০ বছরের পুরোনো, এর সঙ্গে আসন বিভাজনের কোনো সম্পর্ক নেই।” অ্যাডভোকেট মফিজুর রহমান মনে করেন, এ আবেদন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

আন্দোলনের ঘোষণা
কেশবপুর উপজেলা বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাওয়ের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। স্থানীয়রা বলছেন, স্বতন্ত্র মর্যাদা রক্ষায় প্রয়োজনে তারা কঠোর আন্দোলনে নামবেন।

আসন অক্ষুণ্ণ রাখার যুক্তি
১. ভৌগলিক স্বতন্ত্রতা: কেশবপুর একটি পূর্ণাঙ্গ ভূ-রাজনৈতিক সত্তা।
২. জনসংখ্যার ভারসাম্য: একক আসন হিসেবে পর্যাপ্ত ভোটার রয়েছে।
৩. ভবদহের অজুহাত ভ্রান্ত: জলাবদ্ধতার সমস্যা কেশবপুরের পোল্ডারের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।
৪. ঐতিহাসিক মর্যাদা: ১৯৭৯ সাল থেকে কেশবপুর স্বতন্ত্র আসন।
৫. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা: বিভাজন অস্থিরতা সৃষ্টি করবে।

কেশবপুরবাসী জানিয়েছেন, তাদের আত্মমর্যাদা ও স্বতন্ত্র পরিচয়ের প্রতীক যশোর-৬ আসনকে যেকোনো মূল্যে অক্ষুণ্ণ রাখতে তারা ঐক্যবদ্ধ।