
লাগাতার ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে নওগাঁর নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে আত্রাই ও ছোট যমুনা নদীর পানি আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। আত্রাই নদীর দুটি পয়েন্টে পানি ইতিমধ্যে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভাঙার কোনো ঘটনা এখনো ঘটেনি বলে জানিয়েছেন নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী প্রবীর কুমার পাল।
নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, শনিবার (১৬ আগস্ট) দুপুর ১২টায় আত্রাই নদীর জোতবাজার পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার এবং রেলওয়ে ব্রিজ পয়েন্টে ৩১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে, শিমুলতলী পয়েন্টে বিপদসীমার ১৭৫ সেন্টিমিটার এবং মহাদেবপুর পয়েন্টে ১২০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ছোট যমুনা নদীর লিটন ব্রিজ পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ১৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সম্প্রতি উজানে ভারী বৃষ্টিপাত না হওয়ায় পানি বৃদ্ধির হার কমে এসেছে। আবহাওয়া শুষ্ক থাকলে নদীর পানি দ্রুত কমতে শুরু করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রবীর কুমার পাল।
লাগাতার বৃষ্টিপাত ও জলাবদ্ধতার কারণে আত্রাই উপজেলার পতিসর-সমসপাড়া পাকা রাস্তা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে বাহাদুরপুর, দমদত্তবাড়িয়া, হিঙ্গুলকান্দি, জগন্নাথপুরসহ কয়েকটি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। রাস্তায় কোমর সমান পানি থাকায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। পানিবন্দি এলাকার বাসিন্দারা গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন, কারণ গো-চারণভূমি ও উঁচু জায়গার অভাবে পশুগুলো বাড়ির বাইরে বের করা সম্ভব হচ্ছে না।
ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। আত্রাই উপজেলার রসুলপুর, সদুপুর, লালুয়া, বেওলা, নন্দনালী, জগদাস, শিকারপুর, দুবাই, গুরনৈ এবং রাণীনগর উপজেলার নান্দাইবাড়ি, কৃষ্ণপুর, ঘোষগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে দিন-রাত পর্যবেক্ষণ চলছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের সমন্বয়ে গঠিত দলগুলো ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধে সমস্যা দেখা দিলে তাৎক্ষণিক প্রশাসনকে জানাচ্ছে। রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাকিবুল হাসান জানান, জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা অনুযায়ী ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো নিয়মিত পরিদর্শন করা হচ্ছে। ইতিপূর্বে ছোট যমুনা নদীর নান্দাইবাড়ি সংলগ্ন বেড়িবাঁধ মেরামত করা হয়েছে, ফলে এই নদীর পানি বৃদ্ধিতে তেমন ভয়ের কারণ নেই। জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় বালুর বস্তা, বাঁশসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ মজুত রাখা হয়েছে।
প্রবীর কুমার পাল আরও জানান, নদীর তীরবর্তী কিছু নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করলেও বাঁধ ভাঙার কোনো ঘটনা ঘটেনি। আগামী কয়েক দিন ভারী বৃষ্টিপাত না হলে এবং উজান থেকে পানির প্রবাহ কমে গেলে বন্যার আশঙ্কা থাকবে না।
রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাকিবুল হাসান বলেন, “উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড বন্যা নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে স্থানীয়দের সমন্বয়ে দল গঠন করা হয়েছে, যারা কোনো সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত প্রশাসনকে জানাবে। দুর্যোগ মোকাবেলায় আমরা সব সময় প্রস্তুত।” তিনি দুই উপজেলার সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
Comments