মোরেলগঞ্জে দেড় যুগ পর বিএনপির সম্মেলন, ৩ পদে ১২ প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা

দীর্ঘ দেড় যুগ পর বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন আজ শনিবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে প্রার্থীদের প্রচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে পুরো উপজেলা। সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং সাংগঠনিক সম্পাদক পদে মোট ১২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা হলেন অধ্যাপক আব্দুল আউয়াল হাওলাদার, মো. শহিদুল হক বাবুল এবং এফ এম শামীম আহসান। সাধারণ সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট মো. মেহেদী হাসান ইয়াদ, ফকির রাসেল আল ইসলাম এবং মো. আফজাল হোসেন জোমাদ্দার। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে অধ্যাপক আবু জাফর মো. ফাইজুল হক, সাংবাদিক খেলাফত হোসেন খসরু, ফিরোজ শাহ তালুকদার, জাহাঙ্গীর হোসেন লাভলু, মাষ্টার ইউনুস আলী আকন এবং সাবিনা ইয়াসমিন টুলু।
উপজেলা বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, মোরেলগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সর্বশেষ সম্মেলন ২০০৭ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেবার সাবেক এমপি মরহুম ড. মিয়া আব্বাস উদ্দিন সভাপতি এবং মো. শহিদুল হক বাবুল সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিএনপির নেতা-কর্মীরা হামলা, মামলা ও নির্যাতনের শিকার হওয়ায় নিয়মিত সম্মেলন আয়োজন সম্ভব হয়নি। গত জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিএনপি পুনরায় সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করে।
কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী প্রথমে পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ড কমিটি গঠনের মাধ্যমে পৌর বিএনপির সম্মেলন সম্পন্ন হয়। এতে শিকদার ফরিদুল ইসলাম সভাপতি এবং মো. আসাদুজ্জামান মিলন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর উপজেলার ১৪৪টি ওয়ার্ড এবং ১৬টি ইউনিয়ন কমিটি গঠন করা হয়। সম্মেলনের প্রস্তুতি হিসেবে প্রার্থীরা তৃণমূল নেতা-কর্মীদের নিয়ে মিছিল, সমাবেশ ও কর্মী বৈঠকের মাধ্যমে ভোট প্রার্থনা করছেন। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রার্থীদের রঙিন পোস্টার, ব্যানার এবং প্রচারণামূলক তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে।
সম্মেলনে দুটি গ্রুপ আলাদা প্যানেল নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। একটি প্যানেল সমর্থন করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম। এই প্যানেলে সভাপতি পদে অধ্যাপক আব্দুল আউয়াল হাওলাদার, সাধারণ সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট মো. মেহেদী হাসান ইয়াদ এবং সাংগঠনিক সম্পাদক পদে অধ্যাপক আবু জাফর মো. ফাইজুল হক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। অপর প্যানেলটি সমর্থন করছেন জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি কাজী খায়রুজ্জামান শিপন। এই প্যানেলে সভাপতি পদে মো. শহিদুল হক বাবুল এবং সাধারণ সম্পাদক পদে প্রভাষক রাসেল আল ইসলাম রয়েছেন।
সভাপতি প্রার্থী মো. শহিদুল হক বাবুল বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক হিসেবে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আমার নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। ভোটারদের ভোটে আমি শতভাগ বিজয়ী হব বলে আশাবাদী।” অপর সভাপতি প্রার্থী অধ্যাপক আব্দুল আউয়াল হাওলাদার বলেন, “শনিবারের সম্মেলনে ভোটাররা সুষ্ঠুভাবে তাদের মতামত প্রকাশ করবেন। আমি বিশ্বাস করি, কোনো সমস্যা হবে না এবং ভোটারদের ভোটে আমি সভাপতি নির্বাচিত হব, ইনশাআল্লাহ।”
গত ৫ আগস্ট উপজেলা বিএনপির কাউন্সিলের নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামীকাল শনিবার মোরেলগঞ্জ উপজেলা সদরের এসিলাহা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনে ১৬টি ইউনিয়নের ১,১৩৬ জন ভোটার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। প্রতিটি ইউনিয়নে ভোটার সংখ্যা ৭১ জন।
নির্বাচন আয়োজক কমিটি জানায়, কোনো দৈব ঘটনা না ঘটলে শনিবার এসিলাহা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সফলভাবে কাউন্সিল অধিবেশনের মাধ্যমে একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করা হবে, যা মোরেলগঞ্জবাসীকে উপহার দেওয়া হবে।
Comments