Image description

গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা জামে মসজিদ মাঠে শুক্রবার বাদ জুমা নিহত সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনের প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় হাজারো শোকাহত মানুষ, সহকর্মী সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, প্রশাসনের প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নাগরিক উপস্থিত ছিলেন। শুরু থেকেই পুরো পরিবেশে নেমে আসে শোক ও ক্ষোভের ছায়া, অনেকে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি।

স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও সাংবাদিক সংগঠনের নেতারা দ্রুততম সময়ে ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়ে আসামিদের গ্রেফতারে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন। দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার সম্পাদক খায়রুল আলম রফিক কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আল্লাহ যেন আমার ছোট ভাইটিকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসীব করেন। বিচার নিয়ে কোনো প্রকার নাটক মেনে নেব না।

তুহিনের এক সহকর্মী স্মৃতিচারণ করে বলেন, তিনি ছিলেন নির্ভীক ও সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিক। তার মৃত্যুতে আমরা হারালাম সাহসী এক কণ্ঠস্বর। প্রশাসন হত্যাকারীদের দ্রুত সনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেবে, এটাই প্রত্যাশা।

জানাজার পর মরদেহ নিজ গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে বাদ আসর দ্বিতীয় জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হবে।

এর আগে বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) সন্ধ্যায় গাজীপুর নগরীর চান্দনা চৌরাস্তায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও জবাই করে হত্যা করা হয় তুহিনকে। ব্যস্ত এলাকায় সংঘটিত এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডে সাংবাদিক সমাজে তীব্র ক্ষোভ ও শোকের সঞ্চার হয়। নিহত তুহিন দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার গাজীপুর ব্যুরো চিফ ছিলেন।

হত্যার পর থেকে গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাংবাদিকরা বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করছেন। তাদের দাবি দ্রুত জড়িতদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। 

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) এবং গাজীপুর প্রেসক্লাব নেতারা এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন,তুহিন হত্যার বিচার দ্রুত না হলে সারা দেশের সাংবাদিক সমাজ রাজপথে কঠোর আন্দোলনে নামবে। এই হত্যাকাণ্ড মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর বর্বর আঘাত।

সাংবাদিক শার্মিন সুলতানা মিতু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,পুলিশের বিলম্বিত পদক্ষেপ দেখে মনে হচ্ছে আমাদের কলম নামিয়ে রেখে রাজপথে অনশনেই বসতে হবে। দেশে এখন আন্দোলন ছাড়া কিছুই হচ্ছে না।

সাংবাদিক ইব্রাহিম খলিল বলেন, “এত প্রমাণ থাকার পরও কাউকে গ্রেফতার করতে না পারা দুঃখজনক ও অগ্রহণযোগ্য। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা এখনো কেন ধরাছোঁয়ার বাইরে?

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি (অপরাধ উত্তর) রবিউল হাসান জানান, তদন্ত চলছে এবং কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়েছে, তবে মূল অভিযুক্তরা পলাতক। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে টহল জোরদার করা হয়েছে।

নিহত তুহিনের বড় ভাই সেলিম বলেন, তিনি ছিলেন নির্ভীক অনুসন্ধানী সাংবাদিক। অপরাধীদের মুখোশ উন্মোচন করতেই হয়তো তাকে জীবন দিতে হয়েছে। আমরা দ্রুত আসামিদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।

সাহসী এক কলম থেমে গেলেও, সহকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা বলছেন,ন্যায়বিচার না পাওয়া পর্যন্ত তারা লড়াই চালিয়ে যাবেন।