
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার চন্দ্রঘোনা ফেরিটি এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। চট্টগ্রাম-চন্দ্রঘোনা-কাপ্তাই-রাঙামাটি-রাজস্থলি-বাঙালহালিয়া ও বান্দরবান জেলার সাথে কর্ণফুলী নদী পারাপারের একমাত্র বাহন রাঙ্গুনিয়ার চন্দ্রঘোনা ফেরিঘাট। এই ফেরি দিয়ে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে চট্টগ্রাম -পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি- বান্দরবান জেলার দুই লক্ষাধিক মানুষ চলাচল করছেন। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে বর্তমানে ফেরি চলাচলে একেবারে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফেরিটির পল্টুন মরিচা ধরে নড়বড়ে এখন অনেকটা মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, বিগত ২০০৬ সালের ৯ ডিসেম্বর চন্দ্রঘোনা ফেরি দিয়ে পার হওয়ার সময় মালবাহী একটি ট্রাকের ধাক্কা লেগে ফেরির এক পাশের পল্টুন বিধবস্ত হয়ে যায়। এতে অন্য পাশের পল্টুনও মরিচা ধরে নড়বেড়ে হয়ে পড়ে। ফলে বিধবস্তু পল্টুন নিয়ে ফেরি দিয়ে পারাপারে চট্টগ্রাম-চন্দ্রঘোনা ও কাপ্তাই-বাঙামাটি-রাজস্থলি-বাঙালহালিয়া ও বান্দরবান সড়কের যানবাহনগুলোর যাতায়াত ঝুঁকি বেড়ে যায়। ফলে যে কোন সময় ফেরি পারাপারে বড় ধবনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জানা যায়, ১৯৯১ সালে কর্ণফুলী নদী পারপারের জন্য চন্দ্রঘোনা ফেরিটি চালু করা হয়েছিল। বাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগ এই ফেরিটি চালু করে। প্রতিবছর ইজারার ভিত্তিতে ফেরিটি কর্ণফুলী নদী পারপারের কাজ করে আসছে। বছরের পর বছর ইজারা থেকে বিপুল অংকের টাকা আয় হলেও রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগ ফেরিটি চালু করার পর কোন রকম সংস্কার কাজ করেনি। ফলে অযত্ন অবহেলায় ফেরিটির বিভিন্ন অবকাঠোমো দিন দিন মরিচায় অকেজো হয়ে পড়ে। এভাবে ফেরির পুরো পল্টুনও মরিচায় খেয়ে বিনষ্ট করে ফেলেছে। ফলে মালবাহী ট্রাকের ধাক্কা লাগার সাথে সাথে পল্টুন বিধ্বস্ত হয়ে যায়। এছাড়া সংস্কারের অভাবে চন্দ্রঘোনা ফেরি ঘাটটিও এখন ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে বলে যাত্রী ও স্থানীয় মানুষের অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, ফেরির পল্টুনের প্রধান ১টি পিলার ও ফেরিতে গাড়ি উঠা নিরাপদ করার ২টি ছোট পিলার ভেঙে পড়ায় অত্যন্তঝুঁকি নিয়ে যানবাহন পারাপার হচ্ছে। এছাড়া সংস্কার ও মেরামত কাজ না করায় ফেরির পুরো পল্টুন এখন যানবাহন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। একইসাথে চলতি বর্ষার গত কয়েকদিনের অবিরাম বর্ষণে ডুবে গেছে চন্দ্রঘোনা ফেরিঘাটের পাটাতন। শুধু তাই নয়, পাহাড়ি ঢল ও নদীর জোয়ার আসলেই ফেরিঘাটের পাটাতন ক্ষণে ডুবে ক্ষণে ভেসে উঠতে দেখা যায়।এইসময় বেশ কিছু সিএনজি ও মোটরসাইকেল পার হতে গিয়ে পাটাতনে আটকে থাকতে ও যাত্রী ও চালকদের চরম দূর্ভোগ পোহাতেও দেখা যায়।
অথচ ফেরি, ফেরিঘাট ও পল্টুনের যাবতীয় মেরামত কাজ করার দায়িত্ব সড়ক ও জনপথ বিভাগের থাকলেও তাদের অবহেলা ও অব্যবস্থাপনার কারনে চন্দ্রঘোনা ফেরির এই দুরাবস্থা বলে জানান একাধিক যাত্রী ও চালক।
ফেরির তত্তাবধায়ক মোঃ শাহজাহান ও ফেরি চালক আমিন জানান, চলতি বর্ষার গত কয়েকদিনে অবিরাম বর্ষণের ফলে কর্ণফুলি নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় ফেরিঘাটের উভয় পাড়ে পাটাতনে পানি উঠে যায়, ফলে ভারী যানবাহন উঠতে পারলেও হালকা যানবাহন যেমন সিএনজি ও মোটর সাইকেল রাস্তায় উঠতে বেশ কষ্টকর হয়ে পড়ে। তাঁরা জানান, যদি এইভাবে বৃষ্টি অব্যাহত থাকে তাহলে পাটাতনে অতিরিক্ত পানি উঠে যাবে তখন ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
ফেরির ইজারাদার হাজী মুহাম্মদ হোসেন জানান, ফেরির পল্টুন ভেঙ্গে পড়া এবং ঘাটের চরম দুরাবস্থার কথা রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের ঊধর্বতন কর্মকর্তাদের একাধিকবার জানানো হলেও তারা সংস্কারের কোন উদ্যোগ গ্রহণ করছে না। নিজ উদ্যোগে অনেক মেরামত কাজ করে জনস্বার্থে ফেরিটি এখনো কোনভাবে সচল রাখা হয়েছে। পল্টুনের দুরাবস্থার কারণে মাঝে মধ্যে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এছাড়া নিজ উদ্যোগে পল্টুনের মেরামত কাজ করতে গিয়ে তিনি ব্যক্তিগতভাবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে বলে জানান।
তিনি বলেন, দ্রুত ফেরির পল্টুনের সংস্কার কাজ না হলে যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে এবং ফেরি ঘাটসহ সার্বিক মেরামত কাজ না হলে চন্দ্রঘোনা ফেরি চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এতে কাপ্তাই-রাঙামাটি ও চন্দ্রঘোনা-রাজস্থলী-বাঙালহালিয়া-বান্দরবান সড়কের সাথে চট্টগ্রাম শহরের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাবে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি ও বান্দরবান জেলার অনেক স্থানের সাথেও চট্টগ্রামের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। ক্ষতিগ্রস্থ হবে এ অঞ্চলের চাকুরীজীবি ও ব্যবসায়ীরা।
এই ব্যাপারে কথা বলার জন্য টিএন্ডটির একাধিক নাম্বারে ফোন করলেও রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগ এর কোন কর্মকর্তা ফোন রিসিভ করেনি।
Comments